ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। যারা আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার ভয় করে-এমন খোদা ভীরু নেতৃত্ব না আসা পর্যন্ত, এদেশের মানুষ শান্তি ও মুক্তি পাবে না। এজন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের গেন্ডারিয়া-সূত্রাপুর থানা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন,
আগামী নির্বাচনে যাদের দলে গুণ্ডা আছে, বদমাশ আছে, ডাকাত আছে, দুর্নীতিবাজ আছে তাদেরকে বয়কট করতে হবে। তাদেরকে ভোট দেবেন না। ভোটারদের একজোট হয়ে চাঁদাবাজ, খুনি, সন্ত্রাস, ধর্ষক, টাকা পাচারকারীদের বয়কট করতে হবে। যে দলে এমন খুনি ও চাঁদাবাজ থাকবে তাদেরকে ভোট দিবেন না। ভোটাররা এক হলে আগামীতে কোন খুনি ও মাস্তান নির্বাচিত হতে পারবে না।
ফয়জুল করীম অনেক নেতাকর্মী দল ত্যাগ করেছে। জনগণ ট্যাক্স দেয়, ভ্যাট দেয় আর সরকার লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। সেই সুযোগ আর মানুষ কোনো সরকারকে দেবে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন তার পিয়নও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টারে ঘুরতো ফিরতো। তাহলে বুঝুন তারা দুর্নীতির কোন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। তার এ কথায় প্রমাণ করে হাসিনার পরিবার কত হাজার কোটির টাকার মালিক।
বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও হাজার হাজার মানুষ গণসমাবেশে অংশ নেন। এ এক বিরল দৃষ্টান্ত। যা কেবল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশেই সম্ভব বলেও জানান মুফতী ফয়জুল করীম।
তিনি বলেন, অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘গোটা পৃথিবীতে এমন নজির নেই যে, নিজ দেশের ব্যাংকগুলোকে খালি করে বিদেশে টাকা পাচার করে। নিজ দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে বিদেশে সেকেন্ড হোম বানায়। এটা আমাদের দেশের সরকাররা করে, এটা আমাদের জন্য লজ্জার ঘটনা।
মুফতী ফয়জুল করীম বলেন,
আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে এক ব্যতিক্রম অবস্থা সৃষ্টি করেছে। ৫ আগস্টে ফ্যাসিবাদের পতনের পর সব মন্ত্রী-এমপি একযোগে পলায়ন করেন এবং গা ডাকা দেন। এমনকি কোন নেতাও সিনে নেই। এটা কেমন রাজনীতি? তাহলে একজন মানুষও নেই তাদের দলে যে, প্রকৃত দেশপ্রেমী? এখন একজন লোকও বলতে পারে না আমি আওয়ামী লীগ করি। মানুষের মধ্যে ওই দলটি এমন ঘৃণার সৃষ্টি করেছে।
ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ এ নেতা আরও বলেন,
আওয়ামী লীগ পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্ম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নাস্তিক বানাবার জন্য সিলেবাসে এমন সব সংযোজন করেছে যে, এই সিলেবাস দিয়ে ভবিষ্যতে কোন মুসলমান খুঁজে পাওয়া দায় হতো। বিবর্তনবাদের নামে এক পঁচা ও বিশ্ব প্রত্যাখ্যাত সিলেবাসের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে শেষ করার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করেছিল তারা। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে শিক্ষার্থীদেরকে অশ্লীলতা-প্রেম-ভালবাসার নামে অকামে জড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।
মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, শরীয়তের বিধান বোরকা নিয়ে শিল্পকলার নতুন ডিজির আপত্তিকর বক্তব্য আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে কটুক্তিকারী ড. সৈয়দ জামিল আহমেদকে অপসারণ করতে হবে।
তিনি বলেন,
সৈয়দ জামিল আহমেদ ইসলামের বোরকা, দাঁড়ি ও টুপির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি কখনো হিন্দুদের শাঁখা সিঁধুরের বিরুদ্ধে বলেন না! কখনো বৌদ্ধদের গেরুয়া পোশাকের বিরুদ্ধে বলেন না! কখনো খ্রিস্টানদের ক্রুশের বিরুদ্ধে বলেন না! সুতরাং তিনি ধর্ম নিরপেক্ষ নন, তিনি ইসলামবিদ্বেষী। কোন নাস্তিক মুরতাদের ঠাই এ দেশে হবে না।
ফয়জুল করীম শায়খে বলেন, চোর দিয়ে চুরি বন্ধ করা যায় না, ডাকাতদের মাধ্যমে ডাকাতি বন্ধ করা যায় না, আবার দুর্নীতিবাজদের দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। যারা আল্লাহকে ভয় করে, যারা আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার ভয় করে-এমন খোদা ভীরু নেতৃত্ব না আসা পর্যন্ত; এদেশের মানুষ শান্তি পাবে না। মুক্তি পাবে না। এরজন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গেন্ডারিয়া কাঠেরপুল চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেক্রেটারি ডা. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক ফজলুল হক মৃধা, প্রশিক্ষা সম্পাদক মাওলানা নজরুল ইসলাম, নগরনেতা হাজী মানোয়ার খান, গেন্ডারিয়া থানা সভাপতি হাজী মো. জয়নাল আবেদীন, যুবনেতা মুফতী শওকত ওসমান, শ্রমিকনেতা হাফেজ ওবায়দুল্লাহ বরকত, ছাত্রনেতা মুহাম্মদ মাইনুল ইসলাম। সংগঠনের সূত্রাপুর থানা সভাপতি আলহাজ্ব মো. মাসুম হাওলাদারের সভাপতিত্বে এবং গেন্ডারিয়া সেক্রেটারি মাওলানা শহিদুল ইসলাম ও তানভীর হোসাইন মাহমুদীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।