১৪ অক্টোবর, ২০২৪: স্টকহোমের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস ২০২৪ সালের অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করেছে তিনজন অর্থনীতিবিদ—ডেরন আসেমোগ্লু, সাইমন জনসন এবং জেমস এ রবিনসনকে। তাঁদের গবেষণা সমাজের ধনী-গরিব বৈষম্য এবং এর নিরসনের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি জানায়, এই তিন অর্থনীতিবিদকে পুরস্কৃত করা হয়েছে “প্রতিষ্ঠান কীভাবে গঠিত হয় এবং কীভাবে তা সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে,” সেই বিষয়ে গবেষণার জন্য। কমিটির চেয়ারম্যান জ্যাকব সভেনসন বলেন, “এই বছরের বিজয়ীরা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিশাল সমৃদ্ধির ব্যবধানের কারণ সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছেন। তারা দেখিয়েছেন যে, এর মূল কারণ হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দৃঢ় পার্থক্য।”
নোবেল কমিটির বক্তব্য অনুযায়ী, এ বছরের বিজয়ীরা মূলত ধনী-গরিব বৈষম্যের নিরাময় এবং সমাধানের নতুন উপায় উদ্ভাবন করেছেন। অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে কোনো দেশ কেন এগিয়ে যায় এবং কেন পিছিয়ে পড়ে, তা তাঁরা খুঁজে বের করেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন, বৈষম্যের মূল কারণ হলো বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠানের গঠন এবং কার্যকারিতার ভিন্নতা।
তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা বিভিন্ন দেশে যে ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল, তা ঐসব দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু দেশে তাঁরা শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল, যেখানে জনগণকে শোষণ করে সম্পদ কুক্ষিগত করা হয়েছিল। অন্যদিকে কিছু দেশে ইউরোপীয় অভিবাসীদের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণ নিশ্চিত করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। এই বৈষম্যের ফলেই অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে।
নোবেল কমিটি বলেছে, যেসব দেশে শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেসব দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তেমন হয়নি এবং সেগুলো নিম্ন আয়ের ঘেরাটোপে আটকে পড়েছে। শোষণমূলক ব্যবস্থার বিপরীতে, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান সমাজের সকল শ্রেণিকে দীর্ঘমেয়াদী সুফল প্রদান করে। আর শোষণমূলক ব্যবস্থায় কেবল গুটিকয়েক ক্ষমতাধর ব্যক্তি লাভবান হন। ফলে এসব দেশে উন্নয়ন থমকে থাকে এবং বৈষম্য বাড়ে।
ডেরন আসেমোগ্লু ও জেমস রবিনসন, “হোয়াই নেশান্স ফেইল: দ্য অরিজিন্স অব পাওয়ার, প্রসপারিটি অ্যান্ড পভার্টি” গ্রন্থের সহ-লেখক। আসেমোগ্লু বলেন, কোনো রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি নির্ভর করে মেধাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর। তাঁর মতে, এমন প্রতিষ্ঠানই রাজনীতিবিদ ও আমলাদের হাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন ঠেকাতে সক্ষম। আফ্রিকার উদাহরণ দিয়ে তাঁরা দেখিয়েছেন, অনেক দেশে এখন শ্বেতাঙ্গদের শাসন না থাকলেও মুষ্টিমেয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি রাষ্ট্রের সম্পদ শোষণ করে নিচ্ছেন।
এ বছরের নোবেল বিজয়ী এই তিন অর্থনীতিবিদ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানোর উপায় এবং বৈষম্য দূর করার কার্যকর দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।