ঢাকা, শনিবার, ২রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, রাত ১:৫৭
বাংলা বাংলা English English

শনিবার, ২রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলাম ও মুসলমানের পরিচয়: কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী


ইসলাম কী?: ইসলাম শব্দের অর্থ হলো আত্মসমর্পণ। অর্থাৎ কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার জন্য মন ও আত্মাকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা। আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। অন্য কোনো ধর্মের মাধ্যমে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “আল্লাহর কাছে মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম” (সুরা আলে ইমরান : ১৯)।

ইসলামের উদাহরণ: ইসলাম একটি তাবুর মতো, যা রোদ, ঠান্ডা, এবং বাতাস থেকে মানুষকে রক্ষা করে। তদ্রূপ, ইসলাম মানুষকে পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা করে। ইসলাম অনুসারে জীবন পরিচালনার প্রতিটি পদক্ষেপে যারা কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ অনুসরণ করে, তারাই প্রকৃত মুসলমান। কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো” (সুরা বাকারা : ২০৮)।

প্রকৃত মুসলমানের দৃষ্টান্ত: প্রকৃত মুসলমানের দৃষ্টান্ত একটি দেয়ালঘড়ির মতো, যেখানে ঘণ্টা, মিনিট এবং সেকেন্ডের কাঁটা সব ঠিকমতো কাজ করে। তদ্রূপ, মুসলমানের জীবনে ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নত পালনের মাধ্যমে ইমান সঠিক হয়। যেমন দেয়ালঘড়ির ব্যাটারির চার্জ ফুরালে তা বদলানো হয়, তেমনি মানুষের ইমানও মাঝে মাঝে আল্লাহর নির্দেশ পালন করে এবং মজলিসে গিয়ে তাজা করতে হয়।

নামধারী মুসলমানের পরিচয়: যারা ইসলামের কিছু বিধান পালন করে, কিন্তু সবকিছু মেনে চলে না, তাদের উদাহরণ হলো এমন একটি ঘড়ি যার সময়ের সঙ্গে বেতারকেন্দ্রের সময়ের মিল নেই। দূর থেকে দেখতে মুসলমান মনে হলেও, ইসলামের দৃষ্টিতে তারা প্রকৃত মুসলমান নয়।

প্রকৃত মুসলমানের গুণাবলি: কোরআন কারিমে প্রকৃত মুসলমানের গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আল্লাহর কথা স্মরণ হলে তাদের অন্তর ভীত হয়, বিপদে ধৈর্য ধারণ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ যা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করে (সুরা হজ : ৩৫)।

মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য: আল্লাহর হুকুম মেনে চলা এবং ইবাদত করা মানব সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য। এরশাদ হচ্ছে, “আর জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি” (সুরা জারিয়াত : ৫৬)।

ইবাদত কী?: ইবাদত মানে আল্লাহর গোলামি বা বন্দেগি করা। ইবাদত মানুষের মন ও আত্মার সম্পর্ককে আল্লাহর সঙ্গে আরও গভীর করে। হাদিসে আল্লাহ বলেন, “আমার ইবাদতে আত্মনিয়োগ করো, আমি তোমার হৃদয়কে অভাবমুক্ত করবো” (আল মুসনাদ : ১৬/২৮৪)।

ইবাদত সম্পর্কে ভুল ধারণা: ইবাদত কেবল নামাজ, রোজা বা হজ নয়; বরং আল্লাহর সকল আদেশ মেনে চলা এবং নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাকা হলো প্রকৃত ইবাদত। যেমন, কোরআনে বলা হয়েছে, “রাসুল যা দিয়েছেন তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো” (সুরা হাশর : ৭)।

আমাদের জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ইবাদত-বন্দেগিতে পরিণত করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত মুসলমান হতে সহায়তা করুন। আমিন।

লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, ইসলামী চিন্তাবিদ, সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট।

সব খবর