বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষের ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের মতো ঘটনাগুলো ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে। এতে অনেক উদ্যোক্তা তাদের কারখানা এবং ব্যবসায়িক স্থাপনায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য কোনোভাবেই স্বস্তিদায়ক নয়।
ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে ব্যবসায়ীরা বিপদে রয়েছেন। আমদানি-রপ্তানি ব্যবধান বাড়ার ফলে ডলার বাজারে চাপ বেড়েছে, এবং ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় ঋণগ্রহীতারা বড় সংকটে পড়েছেন। এলসি খোলার জটিলতা ও বাড়তি দামে আমদানি করতে বাধ্য হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না, ফলে অনেকেই খেলাপি হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ব্যবসার বিভিন্ন খাতে যেমন—শিল্প, বিনিয়োগ, এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে ঝুঁকি বাড়ছে। ঋণের উচ্চ সুদহার এবং গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যবসায়িক পরিচালনা ব্যয় প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও পণ্যের মূল্যস্ফীতি হ্রাসের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
সরকারের দায়িত্ব হলো ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা, যাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি হয়। পূর্ববর্তী সরকারের সময় এ নিয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হয়নি। ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা এবং অর্থনৈতিক নীতিমালার অকার্যকর বাস্তবায়ন বিনিয়োগের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ব্যাংক খাত পুনর্গঠন, ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া, ব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।