দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আর এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। কেয়ামত আসন্ন এবং মানুষের জন্য জান্নাত বা জাহান্নামের ফয়সালা নির্ধারণ করা হবে তাদের ঈমান ও আমলের ভিত্তিতে। প্রতিটি মুসলিমের জন্য কেয়ামতে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য। কোরআন ও হাদিসে অসংখ্যবার কেয়ামত এবং এর আলামত বর্ণিত হয়েছে। এসব আলামত জানা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে আমাদের ঈমান দৃঢ় হয় এবং আমলে উৎসাহিত হই।
কেয়ামতের আলামতগুলো মূলত দুই প্রকারে বিভক্ত: ক্ষুদ্র আলামত ও বৃহত্তর আলামত। অনেক ক্ষুদ্র আলামত ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, যেমন- রাসূল (সাঃ)-এর আগমন, চন্দ্র বিদারণ এবং ভণ্ড নবীদের উপস্থিতি। অন্যদিকে, কিছু আলামত বর্তমানে প্রকাশিত হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে আরও বাড়ছে।
রাসূল (সাঃ) এর বাণী অনুযায়ী, যখন রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার হবে, আমানতকে ব্যক্তিগত লাভ হিসেবে দেখা হবে, যাকাতকে বোঝা মনে করা হবে, এবং ফাসেক ব্যক্তিরা নেতৃত্বে আসবে—তখন কেয়ামতের আলামত শুরু হবে। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মদ্যপান, ব্যাভিচার এবং অসামাজিক কাজগুলো সমাজে সাধারণ হয়ে উঠবে।
বিশ্বজুড়ে ফিতনা বাড়ছে, মানুষ নিজের ধর্মীয় মূল্যবোধকে ভুলে গিয়ে জাগতিক লোভে মত্ত হয়ে পড়ছে। রাসূল (সাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, একসময় মুসলিমরা ভ্রান্ত পথের অনুসরণ করবে এবং ইহুদি-খ্রিস্টানদের মতো পথে পরিচালিত হবে।
আজকের সমাজে বিভিন্ন ধরনের ফিতনা চোখে পড়ছে। নারী-পুরুষের অনৈতিক মেলামেশা, অশ্লীলতা, এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মানুষের মধ্যে পাপ বেড়ে গেলে, মসজিদগুলো কারুকার্যযুক্ত হবে কিন্তু তাতে আধ্যাত্মিকতা থাকবে না।
এছাড়া তিনি আরও বলেছেন, সময় যতই এগিয়ে আসবে, ফিতনা বাড়বে এবং মানুষ তার জীবনের মূল্যবোধ হারাবে। কেয়ামতের বড় আলামতগুলো যেমন দাজ্জালের আগমন, ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব এবং ইমাম মাহদির আগমন—এসব কিছু বাস্তবায়িত হবে।
প্রতিটি আলামত মুসলিমদের জন্য সতর্কবার্তা। আল্লাহর পথে ফিরে আসার এবং ঈমানকে মজবুত করার সুযোগ হিসেবে এগুলো আমাদের কাছে প্রতিফলিত হয়।
লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, ইসলামী চিন্তাবিদ ও কলামিস্ট, সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট।