জান্নাত, যার অর্থ হলো বাগান, উদ্যান কিংবা পার্ক। এই জান্নাতের মহিমা এবং বৈশিষ্ট্য কল্পনা করাও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। পবিত্র হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জান্নাতে আছে এমন জিনিস যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শুনেনি এবং কোনো অন্তর কল্পনাও করতে পারেনি।” আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, “তাদের পুরস্কার হিসেবে রয়েছে নয়ন প্রীতিকর প্রতিদান যা তারা জানে না।” (সূরা সেজদা, আয়াত ১৭)
জান্নাতের আটটি নাম রয়েছে, যেমন—দারুসসলাম (নিরাপত্তার ঘর), দারুল মুত্তাকীন (পরহেযগারদের ঘর), মাকামুল আমীন (নিরাপদ স্থান), জান্নাতে নায়ীম (নেয়ামতে ভরপুর), জান্নাতে আদন, জান্নাতুল বাকী এবং সর্বোচ্চ জান্নাত হলো জান্নাতুল ফেরদাউস, যার ওপরেই রয়েছে আল্লাহর আরশ।
জান্নাতে ১০০টি স্তর রয়েছে, যার প্রতিটির উচ্চতা আসমান ও জমীনের দূরত্ব সমান। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জান্নাতের বর্ণনা এতটাই বারবার এসেছে যে, তার গুরুত্ব বুঝানো অসম্ভব। আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে নিজ হাতে তৈরি করেছেন এবং প্রতিদিন তাঁর প্রিয় বান্দাদের খুশি করার জন্য জান্নাতকে সাজান।
পৃথিবীর মানুষ যতটা সুন্দর ও আধুনিক বাসস্থান নির্মাণের চেষ্টা করে, জান্নাতের নেয়ামত তার তুলনায় অনেক গুণ বেশি। পৃথিবীর আনন্দ, বিলাসবহুল বাড়ি কিংবা ধনসম্পদ জান্নাতের নেয়ামতের সঙ্গে তুলনীয় নয়। জান্নাতের নেয়ামতগুলো প্রতিটি মুমিনের জন্য পরিপূর্ণ আনন্দ ও শান্তির জায়গা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এই পৃথিবীতে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। যদি আমরা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক চলি, তবে আমাদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যেখানে আনন্দের কোনো অভাব থাকবে না। জান্নাতের রমণীগণ, যাদের সৌন্দর্য ও আকর্ষণ পৃথিবীর কোনো নারীর তুলনায় কল্পনাতীত। জান্নাতের প্রতিটি নেয়ামত আমাদের চিরস্থায়ী ও পূর্ণতৃপ্ত জীবন উপহার দেবে।
জান্নাতের নেয়ামত এবং সুখ-সমৃদ্ধি এমন যে, জান্নাতিরা সর্বদা স্বাচ্ছন্দ্য ও শান্তির মাঝে থাকবে। সেখানে কোনো হিংসা, বিদ্বেষ, দুঃখ কিংবা অভাব থাকবে না। সবসময় থাকবে আনন্দময় পরিবেশ, পাখির কিচিরমিচির, ঝর্ণার সুমধুর শব্দ এবং সুন্দর পরিবেশ।
আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের জন্য থাকবে বিশেষ দুটি বাগান, যা সাধারণ জান্নাতির তুলনায় উত্তম। জান্নাতে এমন সুন্দর সবুজ বাগ-বাগিচা, প্রবাহমান ঝর্ণাধারা এবং অসংখ্য রকমারি ফলের প্রাচুর্য থাকবে যা পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়েই তুলনা করা সম্ভব নয়।
জান্নাত হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির সবচেয়ে বড় প্রতিদান এবং জান্নাতিদের জন্য আল্লাহর দর্শনই হবে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আল্লাহর বিশেষ প্রিয় বান্দারা তাঁকে দেখার সুযোগ পাবে, যা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য হবে।
জান্নাতের নেয়ামত পেতে হলে আমাদের আল্লাহর হুকুম ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর নির্দেশনা মোতাবেক জীবনযাপন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জান্নাতের নেয়ামত দান করুন এবং দুনিয়ার পরীক্ষায় সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট; হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট।