পরবর্তী নির্বাচনে ইসলামী দল গুলো কি ক্ষমতায় আসবে?
——————————————————————
দিগন্ত টিভি দিয়ে শুরু করতে হয় আজকের এই লেখা। বাংলাদেশের সেই সময়ের ডানপন্থী একমাত্র স্যাটেলাইট চ্যানেল দিগন্ত টিভিতে সংবাদ উপস্থাপিকা গন হিজাব পড়ে সংবাদ পড়তেন, ইদানিং গণবিপ্লবের পর ডক্টর ইউনুস সরকার আসার পরেও দু একটি গণমাধ্যমে এমন দৃশ্য দেখেছি। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত এক শিল্পপতি তথা ব্যবসায়ীর । শাপলা চত্বরে হেফাজতের নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ও বিভিন্ন ঘটনার কারণে দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, পিস টিভি, চ্যানেল ওয়ান এবং শাহবাগে স্বাধীনতা বিরোধী বা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের গণজাগরণ মঞ্চে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবি ও কার্যকরের আন্দোলন সম্পর্কে ফ্যাসিবাদের উত্থান সম্পর্কিত বিষয়ে লেখায় সাবেক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান সম্পাদিত আমার দেশ সহ বেশ কয়েকটি মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া বিগত ফ্যাসিবাদি সরকার। প্রশ্ন হচ্ছে যারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চান তাদের কাছে কি সামান্য ক্ষমতা আসতেই তার বাহ্যিক প্রয়োগ জরুরী নাকি পরিপূর্ণ ক্ষমতা আসার পরে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো প্রয়োগ করা জরুরি? কোনটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটি আগে তারা কি বুঝতে পারেন? মক্কা বিজয়ের পর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যাত্রা মহিলাদের পর্দা প্রথা তথা হিজাব নিয়ে শুরু করেছিলেন নাকি শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু করেছিলেন?
কেন বললাম দিগন্ত টিভির কথা দিয়ে শুরু করছি এবং কেনই বা বললাম হিজাব পরার কথা। আর কেনইবা বলব যে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কিংবা অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সাথে ঐক্য করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন এবং ভোটের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন তা নিয়ে আজকের দুটি কথা। শেষ পর্যন্ত গেলেই বুঝতে পারবেন কথাগুলো কতটা বাস্তবসম্মত এবং সত্য। আধুনিক বিশ্বে শাসন করে চলছে পশ্চিমা জায়নবাদী শাসন ব্যবস্থা যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্য যদি বিশ্বের মোড়ল হয় তারা কিন্তু বাস্তবেই পরিচালিত হচ্ছে মেধা, প্রযুক্তি থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়েও ইহুদিদের মেধা নিয়ন্ত্রিত উপায়ে। অর্থাৎ বিশ্ব পরিচালনার মূল মেধা আসছে জায়নবাদী ইসরাইল তথা ইহুদীদের কাছ থেকে। তারা মূল ক্ষমতার মসনদে না বসলেও তাদের মেধা দ্বারাই পশ্চিমারা চালাচ্ছে সারা বিশ্ব। আর শেষ নবী কিন্তু মুসলমানদের প্রধানতম শত্রু হিসেবে ইহুদীদের চিহ্নিত করেছিলেন। অর্থাৎ বর্তমান বাস্তবতায় পশ্চিমাদের মূল শাসন কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসে রয়েছে এই জায়নবাদী ইহুদিরা। যারা প্রকৃতপক্ষে কট্টরপন্থী এবং বিশ্বের ইসলামী শাসনব্যবস্থা কিংবা ইসলামপন্থীদের একমাত্র ও এককভাবে প্রধান দুশমন।। এ অবস্থায় বিশ্বে যদি কোন দেশে সামান্যতম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বা ধর্মীয় শাসন বা ধর্মীয় অনুশাসন চালাতে চায় বা চালাতে যায় তাহলে তাদের শ্যেণ দৃষ্টি পড়ে ওই দেশটির উপর। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে অন্যতম মোসাদ এই ইসরাইলি জায়নবাদী দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা যারা ওই ইসলামপন্থী বা মতবাদে বিশ্বাসী দেশটির পেছনে ভালো করে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস কিংবা হেফাজতে ইসলাম কিংবা সকল ইসলামী দল মিলে কি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় বিজিত হয়ে মসনদে বসবে? আশা করা দোষের কিছু নয় তবে বাস্তবতা নিরিখ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ। যারা এই দলগুলো পরিচালনা করছেন তাদের বুদ্ধির তুলনায় আমার বুদ্ধি বা হিতাহিত জ্ঞান নিতান্তই নগণ্য এবং কোন দিক দিয়েই তুলনীয় নয়। তবুও তর্কের খাতিরে কিছু কথা না বললেই নয়।
তুরস্কের এরদোগান, মিশরের মুরসি ও বাংলাদেশের ইসলামিক দলগুলোর প্রেক্ষাপট কি এক?
————————————————————-
১৯৩০-এর দশকের শেষের দিকে, ইখওয়ানুল মুসলিমিন সমগ্র মিশর জুড়ে তার পরিধি প্রসারিত করে। ১৯৩৬ সালে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ছিল ৮০০। তা থেকে বেড়ে ১৯৪৮ সালের মধ্যে ২০ লক্ষের বেশি জনশক্তির সংগঠনের পরিণত হয়। ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড আধুনিক ইসলামী বিশ্বের অন্যতম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক আন্দোলন। ফেরাউন, পিরামিড, জামাল আব্দুল নাসের, হোসনে মোবারক, মসজিদ কিংবা বর্তমান সেনা শাসক ফাত্তাহ আল সিসির দেশ হিসেবে পরিচিত মিসর। এই নীল নদের দেশ মিসরে চলছিল ফেরাউনী সভ্যতা ও ইসলাম ধ্বংসের জঘন্য অপপ্রয়াস। ইসলামের চিহ্ন মুছে ফেলার সকল আয়োজন চলছিল সর্বত্র। এমন এক সংকটময় মুহুর্তে আন্দোলনের পতাকা হাতে ছুটে আসেন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সন্তান ইমাম হাসান আল বান্না। ইমাম হাসান আল বান্না ১৯২৮ সালে মিশরে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৮ সালের মার্চ মাসে ইসমাঈলিয়ার একদল সম্ভ্রান্ত ও সচেতন ব্যক্তি হাসান আল বান্নার বাসায় সমবেত হন। ছয় জনের এ দলের সদস্যদের নাম যথাক্রমে হাফেজ আবদুল হামিদ, আহমদ আলহাসরী, ফুয়াদ ইবরাহীম, আবদুর রহমান হাসাবুল্লাহ, ইসমাঈল ইজ্জ এবং যাকী আল মাগরেবী। বাংলাদেশে এর সাথে ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠার একটা কাকতালীয় সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঠিক অনুরুপ ৬ জন ব্যক্তি নিয়ে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি করতে মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিন দেশব্যাপী এ সংগঠনটি স্কুল, কলেজ, ক্লাব, হাসপাতাল ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিল। অনুরূপভাবে বাংলাদেশেও অন্যান্য ইসলামিক দল না করলেও বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী সহ কওমি আলেমরা মসজিদ মাদ্রাসা দাতব্য প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল এমন কিছু প্রতিষ্ঠা করেছেন। মিশরের হাসান আল বান্নার পর আবদুল কাদের আওদাহ, সাইয়েদ কুতুব ও হামিদা কুতুবসহ অসংখ্য ইসলামী ব্যক্তিত্বকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। এর সাথে যদি তুলনা করা হয় তাহলে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ এবং আব্দুল কাদের মোল্লা, গোলাম আযম, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মীর কাসেম আলী, বিশ্ববরেণ্য মুখার্জির কোরআনের পাখি বলে খ্যাত আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সহ অনেক নেতাকর্মীকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করেছেন। ইসলামী আন্দোলনের এই দিকগুলোতে উভয় দেশের এই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ে মিল রয়েছে। তবে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখলে তুরস্কের একেপি পার্টির এরদোগান এবং ২০১১ সালে মিশর বিপ্লবের পর ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টির প্রেসিডেন্ট মুরসির রাজনৈতিক কৌশল, প্রজ্ঞা কিংবা দক্ষতার পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। যে কারণে মিশরের ক্ষমতায় দীর্ঘ সাধনার পর ইসলামপন্থীরা তথা মুরসির দল গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসলেও তা ধরে রাখতে পারেনি যা চলে যায় প্রেসিডেন্ট মুরসিরই নির্বাচিত ও বিশ্বস্ত সামরিক কর্মকর্তা, তার পছন্দের বাছাই করা জেনারেল সেনা কর্মকর্তা আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসির কাছে। যিনি এখনো দেশের প্রধান। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে দেয়া হয় ফাঁসির আদেশ। সরকারকে হটিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। অন্যদিকে তুরস্কের প্রধান তথা এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট এরদোগান দাপটের সাথে বিশ্বকে দেখিয়ে দেশ শাসন করছেন এবং তুরস্কের একটি ক্ষমতা বলয় তৈরি হয়েছে বিশ্ব পরিমণ্ডলে যা দেখে পশ্চিমা বিশ্ব অনেকটাই আতঙ্কিত। দল, রাজনীতি কিংবা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে মিশরের মূরসি কিংবা তুরস্কের এরদোয়ান এরা এক হলেও শুধুমাত্র প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, রাজনৈতিক পরিপক্কতা কিংবা বিশ্বের রাজনীতি এবং কূটনৈতিক বিষয়ে সমসাময়িক বিচক্ষণতার বিষয়ে পার্থক্যের কারণে দুটি দেশের ইসলামপন্থীদের ভিন্ন দুটি বাস্তব চিত্র দেখতে হচ্ছে। মিশরে ওই ইসলামপন্থীরা প্রেসিডেন্ট মুরসির ক্ষমতা অবসানের পর চল্লিশ
ক্ষমতাক্রমাগত মার খাচ্ছে জেলে বন্দি হচ্ছে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলছে অন্যদিকে তুরস্কের মডারেট ইসলামপন্থীরা এরদোয়ানের সরকার বিশ্বকাপিয়ে তুরস্ক শাসন করে চলছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলা যায় মুরসির শাসনকালে তার মুখ ভর্তি দাড়ি, গণমাধ্যমগুলোতে নারী কর্মীদের হিজাব এবং ইসলামের পরিচিত চিহ্নগুলো ব্যাপক প্রকাশ কিন্তু অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইসলামপন্থী হলেও তার মুখে নেই কোন দাড়ি ক্লিন সেভ করা একজন ব্যক্তি তার দেশে এবং নেই মুরসির দেশের মতো ইসলামের দর্শনধারী পরিচিতির চিহ্নগুলো। যদি তুলনা করি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলাম কিংবা ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনেক নেতার মুখেই একসময় ক্লিন সেভ দেখা যেত পরে দেশের সংস্কৃতিতে আধুনিক ছেলেরা যেকোনো দল বা মতেই হোক না কেন খোঁচা খোঁচা দাড়ি রাখার একটা সংস্কৃতি চালু করে যাতে শিবিরের দাড়ি রাখতে সুবিধা হয় সেই সুবিধা নিয়ে এখন সব নেতার মুখে দাড়ি দেখা যায়। মিশরের প্রেসিডেন্ট থাকা কালে মূরসির দেশের মতো বাংলাদেশের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দিগন্ত টিভিতে হিজাব পরে খবর পড়তেও দেখেছি আমরা। বর্তমান সময়ের ২০২৪ স্বাধীনতার পর শুধু জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য আসলাম পন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের সাথে মিলে একত্রিত হয়ে ক্ষমতায় আসার একটা ব্যাপক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। যার ঢাক ঢোল ইতিমধ্যেই তারা বাজাচ্ছেন নির্বাচনী সময় না এলেও জামায়াতে ইসলামীর দলের আমির নির্বাচনী প্রচারণার মতন ঘোষণা করেছেন ক্ষমতায় এলে যুবকদেরকে দশ লক্ষ করে টাকা ব্যবসা করতে দেবেন। তুরস্কের ইসলামপন্থী দল একে পি পার্টি কিংবা মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমীন কি তেমনটি করেছিল নাকি ক্ষমতায় আসার আগেই সারাদেশে স্কুল কলেজ তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির পাশাপাশি হাসপাতাল ক্লিনিক এবং সেইসাথে যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজিও তৈরি করে তাতে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। যে কাজটি সরকারে বসে অন্যরা করত না সে কাজটি তারা ক্ষমতার বাইরে থেকেও যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যার ফলে বিভিন্ন ধকল কাটিয়ে ১৯২৮ সালে তৈরি হওয়া এই ইসলামী সংগঠনটি ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টির নামে ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থান তথা বিপ্লবের পর মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক এর পতনের পর ৫১ শতাংশ বেশি ভোট নিয়ে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট মুরসি। কিন্তু দু’বছর না যেতেই ২০১৩ সালে থাকে ক্ষমতাচ্যূত করেন মুরসিদ নির্বাচিত জেনারেল ফাত্তাহ আল সিসি। অর্থাৎ ৮২ বছরের সাধনা দু’বছরেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। আফগানিস্তানেও তাই ঘটেছে ইসলামপন্থী আফগানিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ক্ষমতায় আসে তালেবান তারা প্রথম মনোযোগ দেয় নারীদের পর্দা এবং শরীয়তের কঠোর অনুশাসনের দিকে। অথচ তাদের প্রথম কাজ ছিল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন জনগণের কর্মসংস্থান তাদের নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করা তারপর হয়তো সংস্কার কাজে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে ধর্মীয় সংস্কারের দিকে যেতে পারত তা না করে এসেই তাদের উদ্দেশ্যই জন্য নারীদের পর্দা বাস্তবায়ন। ফলাফল কি হয়েছে? ক্ষমতা হারাতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ আফগানকে শাহাদত বরণ করতে হয়েছে অবশেষে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন কিন্তু তারা তো নিজেদের ভুলগুলো বুঝতে পেরেছে। এবং মডারেট তথা আধুনিক কৌশলে তাদের দেশ শাসন কার্য পরিচালনা করছে। একই রকম ভুল না বললেও অনুরূপ কিছু ভুল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তথা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বিরাজমান। ডক্টর ইউনুস সরকারকে সর্বান্তকরণে সহযোগিতার জন্য প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদের দোসর যারা দেশের এ টু জেড প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতার বলয়ে থাকা ব্যক্তিদের না সরিয়ে বা সরানোর যে পদ্ধতি সেগুলো অবলম্বন না করে তারা ইসলামী দলগুলোর সমন্বিত সম্মেলন সিরাত মাহফিল থেকে শুরু করে এমন কিছু কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন যাতে মনে হয় তারা খেলাফতের শাসন কায়েম করেছেন। কিরাত, নাতে রাসুল, হামদ, কাওয়ালী, নারীদের পর্দার অনুশাসন মানে সব যেন কাজের কাজ বাদ দিয়ে অর্থাৎ মৌলিক কাজগুলো বাদ দিয়ে তারা প্রদর্শনী চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা জানেন না এইসবের মাধ্যমে ভোট অর্জিত হয় না বা এগুলো প্রদর্শনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দেয় না। সংগঠনের অর্থায়নে এক হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা দেশে প্রত্যেকটি উপজেলায় ইন্টারমিডিয়েট কিংবা ডিগ্রী পাস কিংবা এসএসসি পাস বেকার যুবক-যুবতীদের এনজিও গড়ার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যে সুযোগটা ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর আপনাদের হাতে এসেছে। সেটা না করে অন্য দশটা রাজনৈতিক দল যেভাবে প্রচারণা চালায় সেই একই কৌশলে সেই নির্বাচন আসার আগে এতদিন পূর্বেই আপনারা বলে দিলেন ক্ষমতায় আসলে ১০ লাখ করে টাকা দিবেন যুবকদের, এটা কি? দেশের আনাচে-কানাচে অফিস আদালত প্রশাসন সেনা নৌ বিমান এনএসআই ডিজিএফআই সহ এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে আওয়ামী লীগ পরিপূর্ণ ভাবে নেই। ওইদিকে না আছে এই ইসলামী দলগুলোর খেয়াল না আছে বিএনপি’র। কেউ আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলবাজি করার ক্ষেত্রে এগিয়ে কেউবা আছে সিরাত মাহফিল বা বাইরের প্রচার-প্রচারণা করতে, আসল কাজে কেউ নেই। অর্থাৎ ডক্টর ইউনুস সরকারকে পরামর্শ দিয়ে ফ্যাসিবাদের বিষবাষ্প থেকে তাকে মুক্ত করে নির্বাচনের পূর্বে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার যে কর্মযজ্ঞ তাতে কারো খেয়াল নেই।
২০২৪ এর জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান কারা ঘটিয়েছিল?
————————————————————
গণমাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী অনেকেই বলছেন যে প্রায় দেড়শতাধিক ছাত্র সমন্বয়ক এর মধ্যে প্রায় ১০৮ জনই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছাত্র, যদি তাই হয় তাহলে ডক্টর ইউনুস কাদের ইশারায় সরকার হয়েছেন। কাদের ইশারায় ডক্টর ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। তাহলে কেন ডক্টর ইউনুস সরকারের মন্ত্রিসভায় ৩-৪ জন বাদ দিয়ে অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ঘরানার? ডক্টর ইউনুসের ডান হাত আলী ইমাম মজুমদার সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেক ভিডিও ইউটিউবার আপলোড করেছেন, অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং এ পর্যন্ত সরকারের কোন মন্ত্রণালয় কিংবা সামরিক প্রশাসন কিংবা বেসামরিক প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যন্ত ফাঁসিবাদী চরিত্রের আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের বের করে দিয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। না হয়েছে দেশব্যাপী তাদের দোসরদের হত্যাকাণ্ডের কারণে মামলা ও সে কারণে তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার এবং বিচার শুরু কোনোটিই হয়নি। তাহলে জামায়াত কি আওয়ামী লীগের ভোটারদের ভোটের প্রত্যাশায় এমন রাজনৈতিক পরিকল্পনা করছে? আবার বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থাপনা নিয়ন্ত্রণ, তাদের নেতাকর্মীদেরকে নিজেদের ছত্রছায়ায় আশ্রয় দান সহ বিভিন্ন বিষয়গুলো গণমাধ্যমে উঠে আসছে। বিএনপির হাই কমান্ড এ সম্পর্কে অনেক কঠোর হওয়ার পরেও এ ঘটনাগুলো থেমে নেই। এই উভয় দলের আওয়ামী প্রীতি বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসার পরিণতি তাদেরকে কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা তারা আঁচ করতে হয়তো পারছেন না। ইতিমধ্যেই সাবেক আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোন রেকর্ড থেকে এটা স্পষ্ট যে তিনি একটা প্রতিশোধের নেশায় উন্মুক্ত হয়ে আছেন এবং কর্মীর উদ্দেশ্যে তার ফোনে দেয়া বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, তিনি যদি আবার সুযোগ পান তবে কোন আওয়ামী লীগের দলীয় নেতার আত্মীয়-স্বজনের পরিচয়েও কোন বিএনপি জামায়াতের নেতা-কর্মীদের এদেশে বেঁচে থাকার মত সুযোগ থাকবে না। এটা কি বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা অনুধাবন করতে পারছেন? তাহলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০২৪ এর জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থান মূলত কারা করেছে? কারা সরকার গঠন করেছে? অন্তবর্তী কালীন সরকার কাদের তৈরি? কেনইবা আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরের পুরো সেট আপ এখনো সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বজায় রেখেছে? তাহলে দেড় হাজারের অধিক শহীদের বিনিময়ে আন্দোলনটা কেনই বা হলো আরে সফলতাই বা কার প্রশ্ন জনতার। আর দ্বিতীয় প্রজন্মের এই মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার মূল্যই বা কি? এ নির্বোধ জাতিকে কি সারা জীবন তাদের শ্রম, মেধা, আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা স্বাধীনতার বিনিময়ে কি শুধু রাজনৈতিক দলগুলো মুলোই দেখাবে?
জামায়াত বিএনপির রাজনীতির যত ভুল ও প্রত্যাশা
———————————————————————
আওয়ামী লীগ সরকার যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারাই মিডিয়াকে সাপোর্ট দিয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে। একটি দেশের মিডিয়া যে সরকার গঠন এবং টিকিয়ে রাখার জন্য এবং পড়ে যাওয়ার পরেও তার ভূমিকা অসামান্য তা আওয়ামী লীগ বুঝতে পারলেও মাথামোটা বিএনপি জামায়াত এসব সম্পর্কে অজ্ঞ বলে আমি মনে করি। কারণ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় কতটা মিডিয়ার সৃষ্টি হয়েছে খেয়াল করে দেখুন তো? তাদের কতজন সাংবাদিক সারাদেশে রয়েছে? আর রাজনৈতিক বয়ানের দিক দিয়ে তারা তো একেবারেই আওয়ামী লীগের তুলনায় দুধের শিশু। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে মূলত পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকা সেই নেতাদের অদূরদর্শিতা ও একগুয়েমীর ফসল হিসেবে। পাকিস্তানের উভয় অংশ একত্রে থাকলে মাঝখানে থাকা ভারতের জন্য নিরাপত্তাহীনতার কারণ ছিল। যে কারণে ভারত পুরোপুরি শক্তি খরচ করে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতার অবতার বনে যায়। স্বাধীনতার নামে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ নামে এদেশকে ভারত তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দীর্ঘ ৫৩ বছরে তাদের নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের মিডিয়া তথা তাদের এজেন্টরা একটা বয়ান তৈরি করে দেয়, সেটা হচ্ছে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” মানে ইসলাম বিদ্বেষী ধারণা। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সাথে ইসলামের কোন দ্বিমত বা দ্বিধা থাকার কথা ছিল না। কারণ ইসলামের উপর ভিত্তি করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়নি, বিচ্ছিন্ন হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর বৈষম্য থেকে। আর সে বয়ানটি মূলত কৌশলে ভারত বাংলাদেশের খেয়ালীপনা জাতির উপর কৌশলে প্রতিষ্ঠিত করে একঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দ্বিতীয়তঃ পাকিস্তান শব্দের নামের মাধ্যমে “ইসলাম বিদ্বেষী” ধারণা। অথচ বিএনপি জামায়াত এর নেতাকর্মীরা এই স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যায়িত হয়ে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ক্যাঙ্গারু কোর্টের আদেশে মৃত্যুবরণ করেন। অথচ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লব বিএনপি জামায়াত তথা বাংলাদেশীদের কাছে একটা বড় আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ওই পূর্ব বয়ানগুলো ভাগাড়ে ফেলে দেওয়ার জন্য বা ভুল প্রমাণ করার জন্য। যে দীর্ঘ ৫৩ বছর শাসন, শোযন কারা করেছে বাংলাদেশকে? কারা বাংলাদেশের উপর ৫৩ বছর ধরে ছড়ি ঘুরিয়েছিল। যদি ৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে বা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে তাহলে ২০২৪ সালে কেন সেটা আবার করতে হলো? যদি ভারত মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে এতটা উদগ্রীব বা দুশ্চিন্তায় থাকে তাহলে কেন তারা দীর্ঘদিন থেকে স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরীদেরকে হত্যা করে, অমানুষিক নির্যাতন করে তাদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছে? কেন দীর্ঘদিন থেকে চাওয়া সেভেন সিস্টার্সের জনগণকে নির্যাতন করে নিপীড়ন করে রেখেও তাদের স্বাধীনতা ইন্ডিয়া দিচ্ছে না? এই বয়ান বিএনপি জামাত তৈরি করতে পারবে না, কারণ তাদের মাথায় একটাই ঘুরপাক করছে কখন তারা ক্ষমতায় আসবে আর কখন তারা তাদের দাস হয়ে পুনরায় দাসত্ব করবে। যে জাতি তাদের নিজেরদের ভালো মন্দ, নিজেদের স্বাধীনতা, নিজেদের সার্বভৌমত্ব, নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে লোভাতুর সেই লোভাতুর জাতিকে হিতোপদেশ দিয়ে যেন উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মতোই ঘটনা ঘটবে। কেন বিএনপি জামায়াত বয়ান তৈরি করতে পারছে না, যে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান যুদ্ধে আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি যা ছাত্ররা করেছে ২০২৪ এ। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ এবং স্বাধীনতার চেতনার প্রকৃত রূপ। যারা বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানিদের দোসর বা রাজাকার ট্যাগ দিয়েছিল তারা কেন আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাধীনতা দিচ্ছে না? তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের যারা স্বাধীনতার পক্ষে এই স্বাধীন জাতি কেন তাদের পক্ষে নয়? তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সাথে থাকুক এমনটা যারা চাচ্ছে তারা রাজাকার নাকি যারা বিচ্ছিন্ন হতে চাচ্ছে তারা রাজাকার এমন বয়ান-বিএনপি জামাতের মস্তিষ্কে আসবে না যদি আসতো তাহলে দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে তারা পাকিস্তানের দোসর হিসেবে থাকতো না, তারা রাজাকার বা স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবেও চিহ্নিত হতো না। কারণ তাদের সাথে বিশ্বখ্যাত মেধাবী, চৌকস, বুদ্ধিমান ও বিশ্বে বিভিন্ন সময় বয়ান তৈরি কারী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সম্পর্ক নেই, যা আছে আওয়ামী লীগ ও তার বন্ধু পার্শ্ববতী রাষ্ট্রটির। যে কারণে বিএনপি জামায়াতের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন আর দেশের ১৮ কোটি মানুষের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বাঁচানোর স্বপ্নের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। যে কারণে এ জাতিকে আরো দীর্ঘদিন হয়তো পরাধীনতার শৃঙ্খল পরে থাকতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
——————————————————————-
এটা বাংলাদেশ, কর্মী সমাবেশ, কর্মী সম্মেলন, সিরাত মাহফিল, দেশের বিভিন্ন স্থানে কাওয়ালী গানের অনুষ্ঠান কাওয়ালী সন্ধ্যা আয়োজন করে জনগণের ভোট অর্জন করা যাবে না এটা মাথায় রাখতে হবে। কর্মী সম্মেলন আর জনগণের ভোট দুটো অনেক পার্থক্যের বিষয়। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের দলীয় শৃঙ্খলা আদর্শ এবং ঐতিহ্য অনেক সুশৃংখল ও ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এটা অস্বীকার করার উপায় নেই কিন্তু অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো জনগণের সাথে তাদের আন্তরিকতা তৈরীর যে জায়গা সেখানেই রয়েছে তাদের বড় দুর্বলতা। সমাজের বিভিন্ন স্থানে এই রাজনৈতিক দলটি বা অন্যান্য ইসলামী দলগুলো মিশতে চান না, বিচার আচারে যান না, চায়ের দোকান হাট-বাজার কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দিতে জনগণের সাথে আড্ডা দেন না, কোন ঝামেলা দেখলে এড়িয়ে চলেন। ভোটের রাজনীতিতে যে সামাজিক বন্ধন তৈরির প্রয়োজন হয় তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী দল গুলোর মধ্যে দেখা যায় না। এটা ভোটের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে তা তারা তখনই বুঝবে যখন দেখবে যে হাজার হাজার নেতাকর্মী দলে থাকার পরেও অবস্থা অনুকূল হওয়ার পরেও কেন তারা বিজয়ী হতে পারে না এ বিষয়টি যখন বিশ্লেষণ করবেন তখনই তারা এসব দুর্বলতা গুলো খুঁজে পাবেন তার আগে নয়। সেই সাথে এই দলটির একটি স্বার্থপরতার কয়েকটি নমুনা আমি পেয়েছি। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অনেক পুরনো এই দলীয় এক নেতাকে একটা সত্য ঘটনার পক্ষে লড়াই করতে বললে তিনি সরাসরি দলের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন এ দলটি আগে করতাম এখনো ফিল করি তবে এইসব বিষয়ে আমি আর এখন মাথা ঘামাই না। অথচ এমন বাস্তবতা আরো কয়েকটি ক্ষেত্রে আমার চোখে পড়েছে। যারা একসময় ছাত্র জীবনে তাদেরকে ছাত্র সংগঠনের যুক্ত করে তারা ভবিষ্যতে ফিফটি পার্সেন্ট ক্ষেত্রে ঝরে যায় তাদের এই অদূরদর্শিতার কারণে এবং যারা ঝরে যায় তারা তাদের বন্ধু থাকে না বরং শত্রুতে পরিণত হয়।
তাদেরকে এটা মনে রাখতে হবে এবং এটা মনে করেই রাজনীতি করতে হবে, দীর্ঘদিন এই দেশে রাজত্ব করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এই প্রতীকগুলোর প্রতি মানুষের একটা মস্তিষ্কপ্রসূত ছায়া পড়ে রয়েছে। এদের থেকে দৃষ্টি ফেরাতে বা জনকল্যাণমূলক সরকার তৈরিতে আমূল পরিবর্তন করতে হলে দীর্ঘ এক দুই তিন কিংবা আরো বেশি দশকও লেগে যেতে পারে জামায়াত কিংবা ইসলামী দলগুলোর। এই পরিবর্তনের আগে যে ৭০% থেকে ৮০% ভোট নৌকা কিংবা ধানের শীষে দিয়ে আসা লোক গুলো কে একদিনেই বা একমাসেই বা এক বছরেই আপনি দাঁড়িপাল্লা কিংবা হাতপাখা মার্কায় ভোট দেয়াবেন বিষয়টা অত সহজ নয়। এটাই বাস্তবতা। সত্য কথা বলতে গেলে বলতে হয় বাংলাদেশের চারটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্কের কারণে আমি চারটি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে বেশ কিছু প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। সময় পরিস্থিতি বা বিভিন্ন কারণে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রশিবির, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের অংশের রাজনীতি কিংবা সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের হাত থেকে ২০০০ টাকা নিয়ে তার সাথে বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি এ বিষয়গুলো আমি খোলাখুলি এ কারণে বলছি যে, রাজনীতির ধরন সম্পর্কে মোটামুটি সব দলের সম্পর্কে আইডিয়া কিছুটা হলেও অর্জন করেছি। ছোটবেলায় বাবা বলতেন এশিয়ার রাজনীতি বা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোটি কোটি টাকা যদি পকেটে কখনো হয় তখন রাজনীতি শব্দটা মুখে আনবা সেটাও মানুষের কল্যাণের জন্য, তার বাইরে নয়। কারণ ফকিরের জন্য রাজনীতি নয়, রাজার জন্য রাজনীতি-কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে মানুষকে আশ্রয় দিতে চাইলেও কিছু হতদরিদ্র মানুষকে আপনাকে সাহায্য করতে হবে অর্থাৎ অর্থের দরকার রয়েছে। আজকের জামায়াতে ইসলামী এককভাবে কিংবা ইসলামী দলগুলোর সাথে যৌথভাবে ক্ষমতায় আসতে চাইলে তাদের অন্যান্য সাধারণ দল গুলোর মত নির্বাচনী ইশতেহারের মত কেন ঘোষণা দিতে হবে যুবকদের ১০ লাখ করে টাকা দিবেন নির্বাচনে জিতে আসলে? তাহলে বাংলাদেশে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক চরিত্রের সাথে আপনাদের পার্থক্য কোথায়? আপনাদের তো উচিত ছিল, গোপনে নিজস্ব তহবিল থেকে হাজার কোটি টাকা অর্থায়নে দেশের প্রত্যেকটি উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদেরকে আপনাদের মতাদর্শে তৈরি করা, যা করেছিল তুরস্কের একেপি পার্টি, মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড যাদেরকে আপনারা অনুসরণ করেন। যারা দীর্ঘ সংগ্রাম ও দলের নাম অসংখ্যবার পরিবর্তন করে হলেও রাজনীতিতে টিকে থেকে সংগ্রাম করে ক্ষমতায় আসে এবং দীর্ঘ ২ দশকের অধিক সময় ধরে ক্ষমতায় (তুরস্কের একে পার্টি এরদোগান) রয়েছে। এবং তাদের ক্ষমতায় আসার উৎসই ছিল তাদের করা বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সেটা কি আপনাদের দলের মধ্যে আছে এবং সে পথে আপনারা কি হেঁটেছেন? দু’চারটে প্রতিষ্ঠান করে একান্ত নিজস্ব দলীয় যৎসামান্য কিছু যুবকদের চাকরি দিয়ে একটি দেশের ১০-১১ কোটি ভোট তহবিলে নিতে চান? বন্যা, খরা, মহামারী কিংবা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে কিছু সাহায্য দিলেই কি দশ কোটি ভোট আপনাদের বাক্সে চলে আসবে? এটা একটা ক্ষুধার্ত হতদরিদ্রের গুলশানে বিশ তলার শীর্ষ তলায় আরামদায়ক বিছানায় ঘুমানোর স্বপ্নের মত। বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিটা কি এতটাই সরল? কে শুনবে কার কথা?
ডক্টর ইউনুস কি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন দিতে পারবেন?
—————————————————————-
তবে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের সাজানো হাজারো দাবার গুটির মতো বিভিন্ন শাসন কাঠামোর প্রাণকেন্দ্র গুলোতে যেভাবে তারা বসে রয়েছে এবং কৌশলে একের পর এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছে দেশের অভ্যন্তরে তা থেকে ডঃ ইউনুস সরকারকে বাঁচাবে কে? লালমনিরহাটের ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্য কিংবা পার্বত্য অঞ্চলে অশান্তির আগুন কিংবা এমন হাজারো ঘটনা যা একের পর এক ঘটবে, ঘটাবে। এসব নিয়ে দেশ যেভাবে চলছে এভাবেই যদি চলতে থাকে, তবে একটা ভবিষ্যৎবাণী করাই যায়, ইউনুস সরকার যদি শেষ পর্যন্ত টিকেও থেকে কোন ভাবে একটা নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে এবং তাতে যদি আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়, তাহলে নিশ্চিত বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো কেউই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না ফলে তখন যে জঞ্জাল সৃষ্টি হবে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাঠে পুনরাগমন ঘটতে পারে সেই অতীত ফ্যাসিবাদ তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। এবং ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ না থাকলে এই কৌশলটাই তারা অবলম্বন করতে পারে তারা উভয় দলকে ভোট দেবে যাতে কেউই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পেতে পারে। যদি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পায় তাহলে বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্ন থেকে যাবে সেই সুযোগটি কাজে লাগাবে আওয়ামী লীগ। তবে মন্দের ভালো, রাজনৈতিক পট কিন্তু মুহূর্তে মুহূর্তে পরিবর্তন হয়, যদি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম সহ অন্যান্য যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে যেমন গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, কল্যাণ পার্টি, এল এলডিপি, আমার বাংলাদেশ পার্টি সহ অন্যান্য দলগুলো তারা বর্তমান সরকারের দুর্বলতা গুলো কাটাতে যদি আপাতকালীন সময়ে ক্ষমতার আশা ভুলে, সংকীর্ণতা পরিহার করে, ভেদাভেদ ভুলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে এ সরকারকে ফ্যাসিবাদী শাসন কাঠামোর অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা প্রাণীদের বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা করে মুক্ত করতে পারে, সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ আগামী নির্বাচনের জন্য পট তৈরি করে দিতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দেখতে পারে একটি নতুন অধ্যায় তা নাহলে ফিরে যেতে হবে সেই ঐতিহাসিক ফেরাউনি তথা ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থায় এটা বলার অপেক্ষা রাখে না এবং তার ফলাফল কি অনাকাঙ্ক্ষিত ও ভয়ংকর হবে তার সহজেই অনুমেয়।
শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।