রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ সহ হাজারো ছাত্র-জনতা, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মেহনতি মানুষের রক্তের উপর দিয়ে এদেশে যে দ্বিতীয় স্বাধীনতার সুবাতাস বইছে তা বেহাত হতে এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। শুরুতে বলে রাখা ভালো, আমি কারো খাই না, কারো পড়ি না, কারো সদয় দৃষ্টি নিয়ে চলি না, কেউ আমাকে দুটো ভালো বা মন্দ কথার জন্য কোন উপঢৌকন দেয় না, শরীর ঘামানো পরিশ্রমের ফসল খেয়ে দেশকে ভালবাসি, স্বাধীন চিত্তে দুটো কথা যে কোন স্থানে বলা যায়, যা বিগত ১৬ বছরে বলা যায়নি স্বৈরাচারী শাসনের কুফল হিসেবে, সেই জায়গায় দাড়িয়ে আজকে কথাগুলো বলতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পড়ার ধৈর্য না থাকলে লেখাটি না পড়াই উত্তম হবে।
“চিকন বুদ্ধি সম্পন্ন আওয়ামী লীগ সুকৌশলে আবারও ফেরত আসছে ভিন্ন রূপে” শুনে অনেকেই হাসাহাসি করবেন, অনেকে পাগলের প্রলাপ বলবেন, নিজেকে অধিকতর জ্ঞানী মনে করলে আমাকে অনেকে পাগলও বলবেন কিংবা হাঁটুতে বুদ্ধিসম্পন্ন লোকজন আমাকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী বলতেও দ্বিধা করবেন না এটা আমার মনে হয়। ছাত্র জনতার বুকের তাজা রক্তের উপর দিয়ে অর্জিত গণ অভ্যুত্থান অমর্যাদা হোক চাই না কখনো এবং কখনোই তা দেখতে চাইবো না। কিন্তু তাই বলে তো আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারি না। মুক্তচিন্তা কিংবা স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার, সুতরাং এমন আশঙ্কা আপনাদেরও জানা দরকার, তা থেকেই আমার আশঙ্কা প্রকাশ করছি।
ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের সাফল্য দিয়ে ব্যর্থতা ঢাকছে বিরোধীরা?
—————————————————
মাথা মোটা বিএনপি, নিজেদেরকে খুব চালাক মনে করা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, সুযোগ বুঝে রাজনীতি করা চরমোনাই, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (একাংশ), গণতন্ত্র মঞ্চ, ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া নূরের দল গণ অধিকার পরিষদ সহ অন্য ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো এবং সেই সাথে অরাজনৈতিক সংগঠন যারা জীবন দিয়ে শাপলা চত্বরকে রক্তিম করেছে, জীবনেও পুলিশ না দেখা সাদা মনের মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের সেই সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এর রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা কিংবা অতি বুদ্ধির কারণে মাঠে স্বরূপে ফিরছে গণ অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট সদ্য পলায়ন করা আওয়ামীলীগ? ছাত্র-জনতা যখন আন্দোলন করে বিপ্লব তথা গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করার ফল হিসেবে ৫ই আগস্ট পেয়ে যায় তখনই উক্ত দলগুলো ভুলে যায় তাদের ১৬ বছরে বিরোধীদল হিসেবে সরকার পতনে নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতার ইতিহাস।
গণঅভ্যুত্থানের পর কি অর্জন হয়েছে?
—————————————————-
লালবাগ থানায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের নামে করা হত্যা মামলা নিতে পুলিশের দেড় দিনের গড়িমসি আপনাকে কি বিগত সরকারের ক্ষমতার লম্বা হাতের কথা কি স্মরণ করিয়ে দেয় না? স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়কার একজন অনুগত ও দলীয় রাষ্ট্রপতির হাতে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার” গঠনের সম্মতি দেয়া এবং তাদের শপথ পড়ানো কি খুব স্বাভাবিক বলে মনে হয় আপনার কাছে? পুলিশ প্রশাসনের কিছু শীর্ষ কর্তা ব্যক্তি, সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের মন্ত্রীগণ ও কিছু আমলা ব্যতীত এবং বাহ্যিকভাবে সামরিক বাহিনীর একজন ব্যক্তি ব্যতীত অন্যদের রদবদল করা ছাড়া আর কোন কিছুর পরিবর্তন হয়েছে কি?
রাষ্ট্রপতির অধীনে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে তার বৈধতা সংবিধান দিয়েছে কি? রাষ্ট্রপতি কি পদত্যাগ করেছেন? তাহলে এটা আনন্দিত হবার কি আছে ছাত্র জনতা কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর? সংবিধান অনুযায়ী এটা বিগত সরকারের একটা সাময়িক বিরতি মাত্র। কারণ রাষ্ট্রপতি চাইলে সংবিধানের যে অনুচ্ছেদ বলে তার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা অনুযায়ী পূর্বের সরকার তথা শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়েছেন তেমনি একই ক্ষমতা বলে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা বা সরকারকে যেকোনো সময় ভেঙে দিতে পারেন বা অবৈধ ঘোষণা করতে পারেন – এ ক্ষমতা সংবিধানে দেয়া রয়েছে। অর্থাৎ এখনো দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংবিধান অনুযায়ী দেশের রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস নন এবং যারা সেই রাষ্ট্রপতির অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়েছেন, সংবিধান মানলে তারা রাষ্ট্রপতির ওই আদেশ মানতেও বাধ্য থাকবেন। তাহলে বিপ্লব কিংবা গণ অভ্যুত্থানের আইনগত প্রাপ্তি কি – বড় বড় মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তিরা কি এর উত্তর দিতে পারবেন?
সংসদ ভেঙ্গে দিতে রাষ্ট্রপ্রধান সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদকে ব্যবহার করেছেন। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ‘বিবেচনা করতে পারার ক্ষমতা বা ‘অন্তর্নিহিত ক্ষমতা’ (Inherent power) প্রয়োগ করে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার পর নির্বাচিত এক সরকার থেকে আরেক সরকারে যাওয়ার বিধানই রয়েছে সংবিধানে। এর বাইরে তথা মাঝখানে আর কোন কিছুই নেই। গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর সরকার বিহীন এই সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেটাও সংবিধানের বাইরে রাষ্ট্রপতির অন্তর্নিহিত ক্ষমতা যা পরবর্তীতে নির্বাচন হলে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পরবর্তীতে কোন দল ক্ষমতায় আসলে কেবল তাদের পক্ষেই এই সরকারকে বৈধতা দেয়া সম্ভব হবে নচেৎ “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার” তার অধীনে করা “নির্বাচন” সহ সবকিছুই সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ বলে গণ্য করতে পারবে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগ। তার জন্য প্রশাসন থেকে শুরু করে যে চেইন অফ কমান্ড তারা ১৬ বছরে তৈরি করেছে এবং রাষ্ট্রপতি সহ তাদের পক্ষে প্রতি বিপ্লব করা কোন দূরহ বিষয় নয়। সঙ্গত কারণে শেখ হাসিনাকে কোন দেশ আশ্রয় দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি ভারতে থাকায় এবং ভারতের করায়ত্ব থেকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রটির বেরিয়ে যাওয়া কোনভাবেই মেনে নেয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব। যে কারণে “তারা হাত গুটিয়ে বসে নেই” ছাত্র জনতা সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এটা মাথায় থাকা উচিত নয় কি?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সরকারের এক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ওই সময় গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আমরা একটা এক্সট্রাঅর্ডিনারি সিচুয়েশনের মধ্যে এই সরকার গঠন করতে যাচ্ছি। এক্সট্রাঅর্ডিনারি সিচুয়েশনে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে এটাকে বৈধতা দেওয়ার সাংবিধানিক রীতি আছে, নিয়ম আছে- সেটা অনুসরণ করা হবে।” এখন প্রশ্ন হল এটা কি সেই ১৯৯০ সালের এরশাদ সরকার পতনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের মত কোন নিরপেক্ষ ব্যক্তি কি বর্তমান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন? তিনি যে পন্থায় শেখ হাসিনার সরকারকে বিলুপ্ত করেছেন সেই একই পন্থায় বর্তমান ইউনুস সরকারকে বিলুপ্ত করতে পারবেন না এমনটা মনে করার কি কোন উপায় আছে? আগেই বলেছি যে, সরকার ও সরকারের মন্ত্রিসভার মন্ত্রীগণ, কিছু পুলিশ কর্মকর্তা, কিছু আমলা ব্যতীত আর কোন পরিবর্তন হয়েছে কি? যারা ১৬ বছর একটানা শাসন করেছে তারা পুলিশ প্রশাসন, মন্ত্রণালয় তথা জনপ্রশাসন সহ বিভিন্ন বাহিনীতে শূন্য থেকে শীর্ষ পর্যন্ত যে চেইন অফ কমান্ড তৈরি করেছে তা কি ভেঙ্গে গিয়েছে? সেই পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী মিডিয়া বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কি এক বিন্দু পরিবর্তন হয়েছে? রদবদল হয়েছে নাকি তাদের চিন্তাধারার পরিবর্তন করতে পেরেছেন ? বিগত ১৬ বছরে যেসব অনুগত মিডিয়া যারা বর্তমান সময়ের খবর পরিস্থিতির কারণে পরিবেশন করছে তারাই যে এর পরিবর্তিত খবর দেবে না তার গ্যারান্টি কি দিতে পারবে বিরোধী দলগুলো? এক বিচার বিভাগকে ক্যু করার হাত থেকে বাঁচিয়ে যেন বিগত সরকারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করেছে। মনে হয় তারা সবকিছুই উলটপালট করে দিয়েছে এমন একটা ভাব বিরোধী দল গুলোর মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে অথচ কিছুই পরিবর্তিত হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ: কী বলে সংবিধান?
—————————————————–
সংবিধানের ৫৭ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে, যদি-
(ক) তিনি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন; অথবা
(খ) তিনি সংসদ-সদস্য না থাকেন।
৫৭ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ বা সংসদ ভেঙে দিতে লিখিত ভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিলে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন অন্য কোনো সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন নন, তাহলে তিনি সংসদ ভেঙে দেবেন।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কোনো দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা না গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ ৬ মাস কিংবা ১৮০ দিনের মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন দেওয়া বাধ্যতামূলক যদি সংবিধান মেনে নেয়া হয়।
৫৭ (৩) অনুচ্ছেদ আবার বলছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও তার উত্তরসূরি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি পদে থাকবেন। কারণ, সরকার ব্যবস্থায় “ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী বলতে কিছু নেই”।
সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ হওয়ার আগ পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু তিনি দেশ ছেড়ে যাওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নিয়োগ দিতে হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও সংসদ ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়েছেন, এটি জানায়নি কেউ।
বর্তমান সময়ে ১৯৯০ ও ২০০৭ সালের মত সংবিধানের বিধানের বাইরে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ ফিরে এসেছে। এই বিশেষ পরিস্থিতি ২০২৪ সালে ফিরে আসলেও ১৯৯০ কিংবা ২০০৭ সালের মতো নিরপেক্ষ রাষ্ট্রপতি কি ২০২৪ সালে ক্ষমতায় আসীন রয়েছেন নাকি কোন দলের নির্বাচিত একজন অনুগত রাষ্ট্রপতি? উত্তর আছে কি?
ছাত্র জনতা তথা বিরোধী দলগুলোর যে ভুলের খেসারত দিতে হতে পারে
—————————————————————-
১. ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের উপর ভর করে নিজেদের অতি চালাক মনে করা, ১৬ বছরেও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সরকারকে কাবু করতে না পারা বিএনপি, জামায়াত সহ অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলের হয়তোবা মাথায় এটা কাজ করছে যে, বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও সংবিধান কে মেনে নেয়ার পাশাপাশি ড. ইউনুস সহ অন্যান্যরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকলে তাতে তাদের জন্য বিশেষ লাভ হতে পারে। কারণ হিসেবে বলা যায়, তারা হয়তো আশঙ্কা করছেন, –যদি ডক্টর ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন কারণে ১৮০ দিনের অধিক থেকে শুরু করে ২-৪-৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান তাহলে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে তা বাতিল করার চাপ দেবেন অথবা অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি যদি কখনও বর্তমান পরিস্থিতির বিপরীতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে অবস্থান নিতে চান তাহলে তারা ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর ভর করে তখন রাষ্ট্রপতি এবং সংবিধানকে বাতিল করতে চাইবেন। এমন দোটানা মন্তব্যের বা বিশ্বাসের কারণে হয়তোবা বিরোধী দলগুলো রাষ্ট্রপতি এবং সংবিধানকে মেনে নিয়েছেন ফলে এর খেসারত হিসাবে তারা প্রতি বিপ্লবের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন। কারণ সংবিধান অনুযায়ী কোন সরকারকে জোর করে পতন ঘটানো অসাংবিধানিক। অথচ বিরোধী দলগুলোও এই সরল অংকটি না বুঝে নিজেদের অতি বুদ্ধি বা নিজেদেরকে চালাক মনে করে ওই সংবিধানকে অটুট রেখে ওই রাষ্ট্রপতিকে মেনে নিয়ে তারা নিজেরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনা শুরু করেছেন। অথচ একটি বিপ্লব বা কোন অভ্যুত্থানের প্রথম কাজ হচ্ছে পূর্বের সংবিধানকে স্থগিত করে দেয়া বা রদ করা সেই সাথে পূর্বের সরকারের সকল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি দিয়ে জনতার সরকার কিংবা সামরিক সরকার গঠন করা। এটা না করাটাই বিরোধী দল গুলোর প্রথম ভুল।
২. তাদের দ্বিতীয় ভুল হচ্ছে, তারা পূর্বের সংবিধান অনুযায়ী শপথ নেয়াকে সমর্থন করেছেন, পূর্বের সংবিধানকে মান্য করেছেন, পূর্বের সরকারের রাষ্ট্রপতি সহ অন্যান্য সকল বিভাগের চেইন অফ কমান্ডকে অক্ষুন্ন রেখেছেন বা সেই সকল বিভাগের চেইন অফ কমান্ড ভেঙ্গে ফেলতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারেননি এমনকি তাদের সহযোগী প্রচার যন্ত্র-মিডিয়া গুলো বহাল তবিয়তে আছে এখনো।
৩. তাদের তৃতীয় ভুল হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের খুশিতে বিএনপি তাদের নিজের মতো করে ঘরোয়া বা প্রকাশ্যে দলীয় সভা সমাবেশ করে নিজের দল গোছাতে ব্যস্ত রয়েছে, পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজের দলের অবস্থান জানান দিতে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে, নূরের গণ অধিকার পরিষদ হয়তো ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে, পাশাপাশি অন্যান্য দলগুলোও এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই। অথচ তারা জানেনই না, যে তারা আসলে নির্বাচন পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে যেতে পারবেন কিনা! যদি নির্বাচন হয়েও যায় তবে তারা এই সরকারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাবেন কিনা সে নিয়ে যেন কোন ভাবনাই নেই কারো মধ্যে।
একটা প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে, “বিয়ে করতে লাগে বাড়ি” এবং “ঘর বাঁধতে লাগে দড়ি”। বিরোধী দল গুলোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তারা ঘর বাধা ছাড়াই বিয়ে করার জন্য উদগ্রীব এবং দড়ি ছাড়াই সেই ঘর না তৈরি করে সেই স্বপ্নীল ঘরে বাসর করতে যাচ্ছেন!
মাঠে ফিরতে যে কৌশল করছে আওয়ামী লীগ
—————————————————————-
যেই স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদল গুলোর সমালোচনা করা তো দূরের কথা, যেখানে মত প্রকাশ-ই দিল্লি দূরস্ত ছিল, কথা বললেই আইসিটি আইনে গ্রেফতার দেখিয়ে গারদখানা ভর্তি করা হত সেই সময়েও কিছু পরিচিত মুখ ও রাজনৈতিক লেবাসধারী কিছু লোক সরকারের ক্রমানুযায়ী সমালোচনা করে গেছেন বিভিন্ন টকশো কিংবা নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে কিন্তু তাদের কিছুই হয়নি । অথচ এই মাথা মোটা বিরোধীরা সেই সময় সরকারের বিরুদ্ধে সরব থাকায় তাদেরকে তাদের পক্ষের লোক বলে মনে করেছেন এবং এখনো মনে করছেন। অথচ সেই সময়ে সরকারের সমালোচনা করা সেই ব্যক্তিরাই এখন সরব সেই পতিত আওয়ামী সরকারের গুণগান করতে ও গণঅভ্যুত্থানের পর জনতার তীব্র রোষানলে পড়া সরকার সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, ধানমন্ডি ৩২ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পরোক্ষভাবে তীব্র সমালোচনা করতে। এমনকি আগ বাড়িয়ে সেই সরকারের সমর্থনে সুশীল নামের কুশিলবরা বাইরের বিভিন্ন দেশের চ্যানেলে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি খারাপ ধারণা দিতে তৎপর রয়েছে যে চক্র তারা সেই চক্রেরই লোক, তারা কোন না কোন ভাবে বিরোধী দলগুলোর সাথে যুক্ত থাকা ব্যক্তিবর্গ অথচ বিরোধী দলগুলো তাদেরকে আপন মনে করে এখনো কাছে রেখেছেন।
গণঅভ্যুত্থান কারীদের এটা মনে রাখা উচিত কিছু মন্ত্রী, এমপি পালিয়ে গেলেও অধিকাংশ নেতাকর্মী হয়তো সাময়িক সময়ে আত্মগোপনে রয়েছে। সেনাবাহিনীর আইএসপিআর এর বরাতে জানা গেছে, তাদের হেফাজতে থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, পুলিশ অফিসার, আমলা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এতদিন জীবন হানির শঙ্কায় থাকলেও এখন তা না থাকায় তাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছেন। দু’চারজন নেতা বা ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও শতকরা ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী রয়েছেন বহাল তবিয়তে হয়তো নিজের জেলা থেকে ভিন্ন জেলায় কিংবা পরিচিত জায়গা থেকে অপরিচিত স্থানে।
কাজেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে বিরোধী দলগুলো মূল কাজ ছেড়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার স্বপ্নে বিভোর! যে কারণে তারা রাষ্ট্রপতি ও ড. ইউনুসের ক্ষমতার ব্যালেন্স করতে রাষ্ট্রপতি কে মেনে নেয়ার পাশাপাশি সংবিধান কেও মেনে নিয়েছেন, সেই অতি মেধাবী রাজনৈতিক দলগুলো কি তাদের লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে? এমন প্রশ্ন করা মনে হয় অমূলক হবে না। তবে একজন স্বাধীনতাকামী, দেশ প্রেমিক, মুক্তমনা গণমাধ্যম কর্মী এবং ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে রক্ত দিয়ে অর্জন করা ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানকে বিফল দেখতে চাই না বলেই প্রতি বিপ্লবের আশঙ্কা করা এবং বর্তমান ছাত্র জনতা ও বিরোধী দলের কর্মকান্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করা আমার জন্য অমূলক হবে কি?
সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট।