ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি, সকাল ৭:৪৩
বাংলা বাংলা English English

শুক্রবার, ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোয়াখালী থেকে দৃষ্টিহীন শিক্ষকের কোরআনের আলোর প্রচার


সিলেটের জন্তাপুর গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে, ২২ বছর বয়সী হাফেজ মো. ইয়াহইয়া, জন্মগতভাবে দু’চোখে দেখতে পারেন না। তিনি পেশায় একজন মাদরাসা শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

জন্মগত অন্ধত্ব তার জীবনে কোনো প্রতিবন্ধকতা রূপে দাঁড়ায়নি। বরং, তার জীবন শুরু থেকেই তিনি সংগ্রাম করে আসছেন যেন তার সীমাবদ্ধতা তাকে থামাতে না পারে। শারীরিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, তিনি গত পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন মাদরাসায় স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা করে আসছেন, যার ফলে স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বাসিন্দারা তার অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। নিজেরই অনুপ্রেরণা হয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন।

২০০২ সালে জন্মগ্রহণকারী ইয়াহইয়া, জন্মের পরপরই তার বাবা-মা ও পারিপার্শ্বিকরা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই প্রতিবেশীদের মাঝে ব্যঙ্গ ও ঠাট্টা সহ্য করতে হয়েছিল তাকে। সাত ভগনের মধ্যে তিনি পঞ্চম অবস্থানে। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি হিফজ সম্পন্ন করেন এবং কয়েক বছর পর হিফজ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিনি খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং সমাজের চোখে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। তিনি প্রতিবন্ধকতা জয় করে নিজের লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছেন এবং তখন থেকেই বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করছেন।

তার মধুর কণ্ঠস্বর এবং কোরআনের অসাধারণ তেলাওয়াত সবাইকে মুগ্ধ করে। বর্তমানে তিনি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের তা’মীরুল উম্মাহ হিফজুল কোরআন মাদরাসায় হিফজ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এখানে তিনি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষানবিশ হাফেজ তৈরির কাজ করেন। অন্যান্য শিক্ষকদের মতোই তিনি খুব সহজভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ান এবং নেন। শিক্ষার্থীরা তার পড়া পদ্ধতির সাথে অত্যন্ত সন্তুষ্ট।

হাফেজ ইয়াহইয়া গত পাঁচ বছর ধরে বাগেরহাটের আমতলী মাদরাসা ও পাবনার চাওতুল কোরআন মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। তিনি নিজের গ্রাম এবং কর্মরত মাদরাসার সাথে গভীরভাবে যুক্ত আছেন। কারো সহযোগিতা ছাড়াই তিনি পথ চলাচল করেন, একা বিভিন্ন স্থানে যান। গোসল থেকে খাবার সবকিছু তিনি নিজে সম্পন্ন করেন, কারো সাহায্য ছাড়াই। যদিও তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, তবুও অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, তিনি নিজের সব কাজ নিজে করতে সক্ষম। কোরআন পড়া ও এর প্রচারই তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য।

জন্মান্ধ শিক্ষক হাফেজ মো. ইয়াহইয়া বলেন, “আমি ১২ বছর বয়সে হিফজ সম্পন্ন করেছি। জীবনের শুরু থেকেই আমি পৃথিবীর কোনো কিছু উপভোগ করতে পারছি না, তবে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোরআনের সাথে থাকতে চাই।”

সুবর্ণচরের তা’মীরুল উম্মাহ হিফজুল কোরআন মাদরাসার মুহতামিম এইচ, এম, নাছরুল্লাহ বলেন, “দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা স্বপ্ন পূরণের পথে কোনো বাধা নয়, তা’মীরুল উম্মাহর এই উজ্জ্বল শিক্ষক ইয়াহইয়া দৃষ্টিহীন হলেও কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। তার সামনে কোনো বাধা নেই, বরং তিনি এক অনুপ্রেরণার প্রতীক। তার এই উদ্যম ও মানসিক শক্তি সমাজের প্রতিটি মানুষের কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা আশা করছি।”

সব খবর