ঢাকা, রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, দুপুর ১২:২২
বাংলা বাংলা English English
শিরোনাম:
কেরানীগঞ্জে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ৩ জন, আহত ১০ জনেরও পরিচয় চলছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫ জন, হাসপাতালে ভর্তি ৯২৭ জন  দেশের ১৮ অঞ্চলে ঝড়ের শঙ্কা, আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক ইসলামী আন্দোলনের আহ্বান: স্বৈরাচারকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করা রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ৫ কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ ৩ অক্টোবর ২০২৪: আজকের নামাজের সময়সূচি সুইডেন ও আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতরা রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন লঘুচাপের সম্ভাবনা, বৃষ্টি থাকতে পারে আরও কয়েকদিন বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা, রাতেই ঝড়ের পূর্বাভাস যেসব অঞ্চলে মিজানুর রহমান আজহারী দেশে ফিরে এসেছেন

কেরানীগঞ্জে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ৩ জন, আহত ১০ জনেরও পরিচয় চলছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫ জন, হাসপাতালে ভর্তি ৯২৭ জন  দেশের ১৮ অঞ্চলে ঝড়ের শঙ্কা, আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক ইসলামী আন্দোলনের আহ্বান: স্বৈরাচারকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করা রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ৫ কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ ৩ অক্টোবর ২০২৪: আজকের নামাজের সময়সূচি সুইডেন ও আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতরা রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন লঘুচাপের সম্ভাবনা, বৃষ্টি থাকতে পারে আরও কয়েকদিন বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা, রাতেই ঝড়ের পূর্বাভাস যেসব অঞ্চলে মিজানুর রহমান আজহারী দেশে ফিরে এসেছেন
রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপি’র আন্দোলনকে বিএনপি-ই কি স্লো পয়জনিং করেছিল?


যারা বলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান দেশ শাসনকারী সরকার অবৈধ, স্বৈরাচার, একনায়ক, ফ্যাসিস্ট, নিশি রাতের সরকার এমনকি যারা প্রধানমন্ত্রীকেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিশেষনে অবহিত করেন তারা যে আন্দোলন করছেন এই সরকারের বিরুদ্ধে, সেই আন্দোলনটা কি তেমন অবৈধ, ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার বা একনায়ক সরকারের বিরুদ্ধে করা আন্দোলনের মতো মনে হচ্ছে? আদৌ তেমনটি নয়। তাদের আন্দোলনের ধারা, রূপরেখা এবং দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড গুলি দেখে মনে হচ্ছে তারা কোন গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছেন, যেটা সারা বিশ্বের কেবলমাত্র উন্নত রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হয়ে থাকে। সুতরাং তারা তাদের আন্দোলন দিয়েই এটা প্রমাণ করেছেন যে, এই সরকার গণতান্ত্রিক, এই সরকার ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী সরকার নয়, এবং এই সরকার অবৈধও নয়।

স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যুগে যুগে যেমন আন্দোলন হয়েছে সেগুলো কোন নিয়ম তান্ত্রিক আন্দোলন নয়, ইতালির মুসোলিনীর বিরুদ্ধে, জার্মানির নাৎসি পার্টির নেতা হিটলারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছে। আর বিএনপি কিনা সরকারের বিরুদ্ধে সেরকম নাম দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন করবে তাতে সরকারের কি যায় আসে?
বহির্বিশ্বের ফ্যাসিজম বা স্বৈরাচারের কথা বাদই দিলাম নিজ দেশের অভিজ্ঞতায় কি বিএনপি’র ইতিহাস জানা নেই, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন কেমন হয়েছিল? ভাষা আন্দোলন কেমন হয়েছিল? ৭ই মার্চে কেন জনগণ একটা বক্তৃতার কারণে যুদ্ধে নেমে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দেখিয়েছিল? কিংবা স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনটা কেমন হয়েছিল? ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব কেমন হয়েছিল?
আসলে বর্তমান সময়ের বিএনপি তথা বিরোধী দলের এ আন্দোলন হচ্ছে জনগণকে একটা ধোঁকা দেয়া এবং বিএনপি এখনো মরে যায়নি বা বিএনপি সহ বিরোধী দল যারা আন্দোলন করছে তারা জনগণকে এটা দেখানোর কথা তাই দেখাচ্ছে যে, তারা তাদের জনগণের অধিকারের বিষয়ে আন্দোলন করছে। আসলে তারা বাইরে এক ভিতরে আরেক বলে মনে হচ্ছে যদি তা নাই হত তাহলে তারা কিভাবে একটা সরকারের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ করা অবধি অপেক্ষা করে আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে চাইবে? যদি তাই না হতো তাহলে কিভাবে তারা মাসের পর মাস এক দফার নাম করে রেল ইঞ্জিনের মাল গাড়ির মত নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার দিকে ডিগ ডিগ ডিগ ডিগ করে এগিয়ে যাচ্ছে? যদি তাই না হবে তাহলে কেন তারা সারা দেশে রাস্তায় বসে পড়ে সরকারের পতন চাইছে না? এই মাল গাড়ি হয়তো আর কদিন পরে ইঞ্জিন বিকল হবে কি আরো দ্রুত গতিতে সচল হবে কিংবা লাইনচ্যুত হয়ে জনতার ঘাড়ে গিয়ে পড়ে তাদের ক্ষতি করবে তা ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারা মাল গাড়ির আন্দোলন চালাবে আর সরকার কি বসে বসে মুলো চিবোবে? মূলত জনগণকে আশ্বস্ত করা তাদের এই আন্দোলন যদি সফল না হয় তারা ইতিহাসের আস্তাকুরে নিক্ষিপ্ত হবে বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনতার কাছে।

তাহলে শুরুতেই প্রশ্ন আসে ফ্যাসিবাদ কি? এর বৈশিষ্ট্য গুলো কি – আসুন জেনে নেয়া যাক…
—————————————————————————————-

ফ্যাসিবাদঃ
————–
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় “ফ্যাসিবাদ” হল একটি স্বৈরশাসকের নেতৃত্বে সরকারের একটি ব্যবস্থা যারা সাধারণত জোরপূর্বক এবং প্রায়শই হিংসাত্মকভাবে বিরোধী মত ও সমালোচনাকে দমন করে, দেশের সমস্ত শিল্প ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে, জাতীয়তাবাদ এবং প্রায়শই বর্ণবাদকে প্রচার করে।

ফ্যাসিবাদ হল একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং গণআন্দোলন যা দুইটি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেকার তথা ১৯১৯ এবং ১৯৪৫ সালের মধ্যে মধ্য, দক্ষিণ এবং পূর্ব ইউরোপের অনেক অংশে আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং পশ্চিম ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, ল্যাটিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যেও এর অনুগামী ছিল।

ফ্যাসিবাদ (fascism) শব্দটি ল্যাটিন ফ্যাসেস (fasces) থেকে এসেছে। যা সাধারণত একটি প্রসারিত কুঠার ফলক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল। ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের প্রতীক হিসাবে ফ্যাসেসগুলো বা কুঠার ফলক ১৮ এবং ১৯ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রজাতন্ত্রী ফ্রান্স জুড়েও অধিষ্ঠিত ছিল।

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্যঃ
——————————

চরম সামরিক জাতীয়তাবাদ, নির্বাচনী গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উদারতাবাদ, প্রাকৃতিক সামাজিক স্তরবিন্যাস এবং অভিজাতদের শাসনে বিশ্বাস ইত্যাদি ফ্যাসিবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও ফ্যাসিবাদ মতাদর্শ সংজ্ঞায়িত করা কঠিন তবে, ২০ শতকের অনেক ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের আরো বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন,
-এটি একটি কঠোর জাতীয়তাবাদী, এবং কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র সাধারণত যা একটি দলের প্রধান ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়।
-গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন হয় না।
-মুক্ত বাজার নেই।
-ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বা স্বতন্ত্র গৌরব নেই।
-রাষ্ট্র প্রেস এবং অন্যান্য সমস্ত মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
-ফ্যাসিবাদী সরকারগুলো সাধারণত একজন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয় যিনি একজন স্বৈরশাসক।
-ফ্যাসিস্ট হল অতি-জাতীয়তাবাদী যারা অন্যান্য জাতীয়তাবাদী জাতি এবং নেতাদের বিশ্বাস করে না।
-ফ্যাসিস্টরা আন্তর্জাতিকতাবাদকে অবিশ্বাস করে এবং খুব কমই আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলে।
-ফ্যাসিস্টরা আন্তর্জাতিক আইনের ধারণায় বিশ্বাস করে না।
ইউরোপের প্রথম ফ্যাসিবাদী নেতা, বেনিটো মুসোলিনি, লাতিন শব্দ fasces থেকে তার দলের নাম নিয়েছিলেন। যদিও ফ্যাসিবাদী দল এবং আন্দোলনগুলো একে অপরের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে, প্রধান ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদী দলগুলো ভেঙে যায় এবং কিছু দেশে (যেমন ইতালি এবং পশ্চিম জার্মানি) আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নিষিদ্ধ করে। ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে, ইউরোপের পাশাপাশি ল্যাটিন আমেরিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতে অনেক ফ্যাসিবাদী-ভিত্তিক দল এবং আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আসলে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং ফ্যাসিবাদি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পার্থক্য কি বা কেমন হয় তা হয়তো বিএনপি তথা বিরোধী দলগুলো জানেন অথবা জানেন না। জানলে তাদের সম্মুখভাগের সমর যোদ্ধারা হয়তো সেভাবে প্রস্তুত নন, এমনো হতে পারে তাদের সেই সমরযোদ্ধারা স্লো পয়জনিং এর শিকার নয়তো বা তাদের এ সম্পর্কে ধারণাই নেই। আর না হলে তাদের আন্দোলন জীবন বাঁচাতে জনগণের কাছে নাম জিইয়ে রাখতে একটা যেনতেন আন্দোলন।

যাই হোক আমাদের জানা দরকার একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা গতানুগতিক প্রাথমিক পর্যায়ে কেমন হয়-
“সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, এই কর্মসূচিতে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান সম্বলিত জনগণের স্বাক্ষর, সেই স্বাক্ষর সম্বলিত পত্র স্মারকলিপি হিসেবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রদান, সীমিত আকারে সরকার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভা, ঘরোয়া সেমিনার, স্বল্প পরিসরে সরকারবিরোধী মিছিল সমাবেশ, এবং ধীরে ধীরে এটির মাত্রা বাড়িয়ে বৃহত্তর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন। এতে আরো থাকে যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংসদে বিরোধী দলের সদস্য থাকেন তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন, মোটকথা সম্মিলিতভাবে সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রদান করার এইসব পদ্ধতি মূলত গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পন্থায় বা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় বিরোধিতা করার বা বিরোধী মতের আন্দোলনের মডেল। যা বিএনপি তথা বিরোধী দলগুলো করছে এবং তারা এটা প্রমাণ করেছে যে বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক।

এই একই পন্থা অবলম্বন করছে বিএনপি তথা বিরোধী দল যারা কিনা তাদের আন্দোলনের কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন ফলে অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিক হওয়ার কারণে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ পরিচালনা করছে। তাহলে তাদের এই মত এবং তাদের আন্দোলনের ধরনের কোন মিল না থাকায় তাদের আন্দোলন এটাই প্রমাণ করে- তারা একটা গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। এবং তাদের আন্দোলনের ধরনটা একটা গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন যেটা উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে স্বভাবতই হয়ে থাকে, এমন আন্দোলন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কখনোই হয় না।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্যাসিজম এর উত্থান ঘটে দেশে দেশে । এই উত্থান হওয়া ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও বিভিন্ন দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে এই ফ্যাসিজম এর বিরুদ্ধে বেশ বড়সড় ভূমিকা রাখে । ১৯১৫ সালে ইতালিতে বিপ্লবী অ্যাকশনের ফ্যাসেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ১৯১৯ সালে মুসোলিনি মিলানে ইতালীয় ফ্যাসিস অফ কমব্যাট প্রতিষ্ঠা করেন, যা দুই বছর পরে জাতীয় ফ্যাসিস্ট পার্টিতে পরিণত হয়।
অন্যদিকে হিটলারের নাৎসি পার্টি ১৯৩৩ এর শুরুতে জার্মানিতে ক্ষমতা দখল করে এবং তাদের বিরুদ্ধে করা জনতার আন্দোলন একসময় বিশ্বে প্রভাব ফেলেছিল এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছিল বিশ্ব।

বিশ্বজিৎ ঘোষের লেখা বই ” আন্তর্জাতিক ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও রবীন্দ্রনাথ” এ উল্লেখ করার মত বিভিন্ন স্থান থেকে ভগ্ন কয়েকটি লাইন বা পংক্তি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নাৎসিবাদী নেতা হিটলার ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতের জহরলাল নেহেরু এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইতালির মুসোলিনি সম্পর্কে বলেন, “ফ্যাসিবাদ ইতালির বিশেষ কোনো ব্যাপার নয় এটি দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যখন কোন দেশের শ্রমিক শ্রেণী ( এখানে নিম্নবিত্ত তথা নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে বুঝানো হয়েছে) শক্তিশালী হয়ে ওঠে তখন তাদেরকে দমনের জন্য রাষ্ট্রের পুলিশ প্রশাসন , সামরিক বাহিনী যখন তাদেরকে গণতান্ত্রিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তখন ফ্যাসিস্ট রাস্তা গ্রহণ করে। সভ্যতা যখন বিপদাপন্ন তখন আমরা বহু যুগ ধরে অন্নাভাবে, জীর্ণ, হীনতায় নিমর্জিত ভারতবাসীরা নিরুদ্দিগ্ন থাকিতে পারিনা। পরদিন সোভিয়েত দিবসে টাউন হলে শ্রমিক , কৃষক বুদ্ধিজীবীদের এক জনসভা হয়, সেখানে সোভিয়েত সুহৃদ সংঘ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ডঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্তকে সভাপতি, হীরেন মুখার্জি ও এস কে আচার্যকে যুগ্ম সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়। তখন রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ থাকায় তিনি বলেন তিনি সুস্থ হলে এর পৃষ্ঠপোষক হবেন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এর শাখাও গড়ে ওঠে। তবে জীবদ্দশায় তার সেটি আর সম্ভব হয়নি তবে তিনি তার গ্রন্থে যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে কিছু কবিতা লিখেছেন তার কয়েকটি পংক্তি তুলে ধরা হলো…

“নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস,
শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস
বিদায় নেবার আগে তাই
ডাক দিয়ে যাই
দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে
প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে”

“যেদিন চৈতন্য মোর” কবিতায় তিনি আরো লিখেছেন-
সমাসীন বিচারক শক্তি দাও শক্তি দাও মোরে
কন্ঠে মোর আনো বজ্রবানী, শিশুঘাতি নারীঘাতি
কুৎসিত বীভৎসা পরে ধিক্কার হানিতে পারি যেন
নিত্যকাল রবে যা স্পন্দিত লজ্জাতুর ঐতিহ্যের
হৃদস্পন্দনে রুদ্ধ কণ্ঠ ভয়ার্ত এ শৃঙ্খলিত যুগ যবে
নিঃশব্দে প্রচ্ছন্ন হবে আপন চিতার ভস্ম তলে।

তবে রবীন্দ্রনাথের ক্ষুরধার কবিতায় বিশ্ব থেকে ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিবাদ এর পতন হয়েছে কিনা সংশ্লিষ্ট সম্পর্কিত বিষয় আমার জানা নেই, তবে পৃথিবী থেকে সে সময় ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে এবং হিটলার, মুসোলিনি ইতিহাসের পাতায় ঘৃণিত মানব হত্যাকারী, মানব সভ্যতা ধ্বংসকারী এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে যুগে যুগে মানুষের কাছে ঘৃণা এবং ইতিহাসের আস্তাকুরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, এবং মুসলিম ধর্মের সৌদি আরবে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার জায়গার মতো তাদের অবস্থান জনগণের হৃদয়ে যুগে যুগে থেকেই যাবে।

সাংবাদিক , লেখক ও কলামিস্ট।

সব খবর