মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন যে, ইরানের তেল স্থাপনায় সম্ভাব্য ইসরায়েলি আক্রমণের বিষয়ে তারা সমর্থন করেন না। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকারে বাইডেন জানান, ইসরায়েল কি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রগুলিতে আক্রমণ চালাবে কিনা নিয়ে আলোচনা চলছে। যখন সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেন যে, ইসরায়েল যদি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় তেহরানের তেল স্থাপনায় আক্রমণ চালায়, তাহলে কি হবে, তখন বাইডেন বলেন, “আমরা আলোচনা করছি।”
বাইডেনের এই মন্তব্যের পর আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, সর্বাত্মক লড়াই এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন এবং ইসরায়েলকে সমর্থন জানাবেন।
বাইডেন স্পষ্ট করেছেন যে, ইরানের পারমানবিক কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা তিনি সমর্থন করেন না। এ সম্পর্কে জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত ড্যানি ড্যানন বলেন, প্রত্যাঘাতের ক্ষেত্রে অনেক বিকল্প আছে এবং তেহরানকে তাদের শক্তি প্রদর্শন করার সুযোগ থাকবে।
মঙ্গলবার ইসরায়েল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রগুলিতে হামলা চালিয়েছে, এর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন যে তারা প্রত্যাঘাত করবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও বলেন, ইরান প্রত্যাঘাত করতে প্রস্তুত এবং কোনো সন্ত্রাসী বা সীমা অতিক্রম করলে তাদের সেনাবাহিনী প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
বর্তমানে, লেবাননের বৈরুতে ইসরায়েলের বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকালে বৈরুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ইসরায়েলের বিমান হামলা হয়েছে বলে লেবাননের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এছাড়াও, বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলিতেও মধ্যরাতের পর হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে হিজবুল্লার শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরায়েল সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হাশেম সাফিয়েদ্দিনকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছে, তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এ ব্যাপারে মন্তব্য করেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (WHO) জানিয়েছে, লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণে ২৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন এবং ৩৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে। বৈরুতের পাঁচটি হাসপাতাল সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে খালি করে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রধান জানান, বোমা হামলার কারণে স্বাস্থ্যকর্মীরা পালিয়ে গেছেন, ফলে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। বৈরুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকায় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে নিশানা করেছে। লেবাননের রেড ক্রস জানিয়েছেন, যখন তারা আহতদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ইসরায়েলের বিমান হামলা হয় এবং এতে চারজন স্বাস্থ্যকর্মী আহত হন। এছাড়াও, লেবাননের এক সেনার মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননের ২০টি শহর খালি করে আবাসিকদের স্থানান্তরের জন্য বলেছে। মোট ৭০টি এলাকায় আবাসিকদের চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সংঘাতের ফলে অঞ্চলজুড়ে মানবজীবন এবং অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ এই দ্বন্দ্বের সমাধানে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।