১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও তাদের দোসররা এখনো ওঁত পেতে আছে। সুযোগ পেলেই তারা বহু জীবনের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত হানতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ‘এমন অবস্থায় জুলাই-আগস্টে যেভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, জনগণের অধিকার রক্ষায় সবাইকে সেভাবে সার্বক্ষণিক সজাগ থাকাতে হবে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারের পাবলিক হলে আয়োজিত দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নির্মূলে ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা সভায় এসব কথা বলে তিনি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যখন ভাঙার সময় আসে তখন আমরা এক হয়ে যাই। যেমন ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, নব্বইয়ের অভ্যুত্থানে কিংবা ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে আমরা সবাই এক হয়ে লড়েছিলাম। এ সময় আমরা কাউকে জিজ্ঞেস করিনি কে সরকারি চাকরি করে-কে করে না, কে বিসিএস ক্যাডার-কে ক্যাডার না। এভাবে পৃথিবীর সবকিছুতেই ভাঙার সময় এক হয় মানুষ, কিন্তু যখন গড়ার সময় আসে তখন বিভাজন সৃষ্টি হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আমাদের মাঝে কোনো বিভেদ ছিল না। যখন রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের সময় এসেছে তখনই বিভাজন তৈরি করছি। এই জায়গা থেকে আমাদের বের হতে হবে। বাংলাদেশের প্রশ্নে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হলে রাষ্ট্র সংস্কারের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে যাবে উল্লেখ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, একটি সুষ্ঠু, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে প্রশাসন, চিকিৎসকসহ সব ধরনের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। সে হিসেবে ছাত্রদের দাবি বা প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনের সাথে কথা বলার সময় সহযোগিতার সুরে কথা বলব, চাপের সুরে নয়।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্টদের সরাতে শত শত ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছেন। তারা তো কোনো পদ-পদবি চাননি। আন্দোলন শেষে আমরা যখন রাষ্ট্র ও সরকার মেরামতের কাজে হাত দিয়েছি, তখন অনেকেই পদ-পদবির জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।’
হাসনাত বলেন, সমাজে যে বিদ্যমান দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং যত অপকর্ম রয়েছে, ছাত্র সমাজকে এসবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান থাকতে হবে। যদি স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে শহীদদের রক্তে যে কর্তব্য তা ভুলে গিয়ে নিজেদের স্বার্থে বিভক্ত হয়ে সমস্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আমরা ব্যর্থ হলে, তা ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনে পথ তৈরি করে দেবে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন চোখে চোখ রেখে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে স্বৈরাচার সরকার যে সম্পর্ক ছিল তা হচ্ছে নতজানু সম্পর্ক। আগামীতে বাংলাদেশে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে চোখে চোখ রেখে সম্পর্ক।’
মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, কক্সবাজারের সমন্বয়ক শাহেদ ওয়াহেদ, শাহেদ মাহমুদ লাদেন, ফাহমিদা হাসানসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।