বাংলাদেশের কৃষকরা জনপ্রতি হিসেবে খুবই সীমিত পরিমাণ ভর্তুকি পান, এবং গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এই ভর্তুকির পরিমাণ কমানো হয়েছে। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে কয়েক দশক ধরে ভর্তুকি প্রদান করা হলেও, গত তিন বছরে এর প্রভাব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিতে ভর্তুকি ছিল ২৫ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেমে আসে ২৪ হাজার ৩৩২ কোটি টাকায়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় সাত হাজার ৭১ কোটি টাকা কম। এতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাজেট হ্রাস পেয়েছে বলে জানা যায়।
অর্থমন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, দেশে কৃষি উপকরণের খরচ বিভিন্ন কারণে বাড়ছে। ভর্তুকি কমালে কৃষকদের উপকরণ খরচ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা, খরা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষি উৎপাদন কমার ঝুঁকি সৃষ্টি করে, ফলে দেশের স্বার্থে শস্য আমদানির ওপর নির্ভর না করে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। এজন্য কৃষকদের পর্যাপ্ত ভর্তুকি প্রদান অপরিহার্য।
তবে দেশের খাদ্যশস্যের চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্যের মধ্যে নানা অসংগতি রয়েছে। উপকরণসংকট, মাঠ পর্যায়ে অদক্ষতা, প্রযুক্তির অভাব, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাল বাদে ১১টি খাদ্য ও কৃষি পণ্যের আমদানি হয়েছে প্রায় ৮৭ লাখ ১২ হাজার টন।
বড় ধরনের আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, যেমন বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অন্যতম শর্ত হলো দেশের ভর্তুকি কাঠামোতে পরিবর্তন আনা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকি কমানোর শর্ত রয়েছে। এছাড়া ঋণদাতা সংস্থাগুলো থেকে বিভিন্ন সময়ে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ ও চাপ দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানো হলে সার্বিক উৎপাদনব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলমের মতে, দেশের কৃষকদের প্রয়োজন অনুসারে যথাযথ ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার কৃষি উপকরণের বাড়তি দামকে বিবেচনায় নিলে প্রকৃতপক্ষে ভর্তুকি আরও কমে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হলে কৃষি জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদান করতে হবে, যেখানে বর্তমানে এটি ৩ শতাংশেরও নিচে রয়েছে।