১ অক্টোবর, ২০২৪: বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদ্য প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকে একজন আপসহীন সাংবাদিক নেতা হিসেবে স্মরণ করেছেন নাগরিক শোকসভায় বক্তারা। তারা বলেন, সাংবাদিকদের রুটি-রুজির আন্দোলনে সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রুহুল আমিন গাজী। তার সাহসী নেতৃত্ব সাংবাদিকতার জগতে বিরল। দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা যখনই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তিনি বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। সর্বশেষ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অসুস্থ থাকলেও তিনি রাজপথে নেমে সাংবাদিকদের সাহস জুগিয়েছেন। তার মৃত্যু সাংবাদিকতা জগতে একটি বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত এক নাগরিক শোকসভায় জাতীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এসব কথা বলেন। ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল এবং ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংবাদিক নেতা ড. আব্দুল মান্নান।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও সরদার ফরিদ আহমদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, বিএফইউজের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার ও এ কে এম মহসিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, প্রচার সম্পাদক সাজাহান সাজু, ডিইউজের সহ-সভাপতি রফিক মুহাম্মদ ও রাশেদুল হক, আমার দেশের বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহনেওয়াজ, ফেনী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সিদ্দিক আল মামুন ও মুন্সিগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন।
সভায় রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন তার পিতার স্মৃতিচারণ করেন। সভা সঞ্চালনা করেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব বাছির জামাল, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার এবং ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “রুহুল আমিন গাজী ভাই নেই, এটা বিশ্বাস করাও কষ্টকর। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই তাকে চিনি। তিনি ছিলেন অসীম সাহসী নেতা। প্রতিকূল পরিবেশেও তিনি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের আগের দিনও তিনি অসুস্থ অবস্থায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।”
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “রুহুল আমিন গাজী ভাইকে হারিয়ে একটি শূন্যতা অনুভব করছি। তার মতো সাহসী নেতৃত্ব বিরল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সাংবাদিকদের পেশা বিরোধী সব কালাকানুনের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। এজন্য তাকে ১৭ মাস কারাগারে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।”
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, “রুহুল আমিন গাজী সাংবাদিকতার জগতে ঐক্যের প্রতীক ছিলেন। গণতন্ত্রের মুক্তি ও ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আজ নেই, কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো নতুন সরকারে রয়ে গেছে। তাদের মনে রাখা উচিত, তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলেই এখানে বসতে পেরেছে। ভুল করলে তাদের পরিণতিও একই রকম হবে।”
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, “রুহুল আমিন গাজী দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্র রক্ষা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে গেছেন, কখনও বিরতি দেননি। বর্তমান মুক্ত বাংলাদেশে মাহমুদুর রহমান কেন জেলে আছেন? তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে, না হলে আমরা আবারো রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।”
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, “রুহুল আমিন গাজীকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করা উচিত, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম তার সম্পর্কে জানতে পারে এবং তার আপসহীন লড়াকু নেতৃত্বের ইতিহাস ধরে রাখতে পারে।”
সভাপতির বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম বলেন, “রুহুল আমিন গাজী আন্দোলনে একজন সাহসী নেতা ছিলেন। রুটি-রুজির আন্দোলনে তার সমকক্ষ কোনো নেতা নেই। আন্দোলনে তিনি আমাদের বটগাছ ছিলেন এবং তার শূন্যতা আমরা পূরণ করতে পারবো কিনা জানি না।”
রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন বলেন, “আমার বাবাকে যেভাবে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়েছে, তাতে আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি সবসময় দেশের মানুষের কথা ভাবতেন এবং একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র দেখতে চেয়েছিলেন। আশা করি, সাংবাদিক সমাজ সেটি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে, তবেই আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।”