ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি, দুপুর ২:০৩
বাংলা বাংলা English English

শুক্রবার, ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাকচালকদের মাধ্যমে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে দেশের বিপুল জ্বালানি তেল


প্রতিদিন চোখের সামনেই ট্রাকচালকদের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল। মূলত দামের পার্থক্যের কারণে এই পাচার হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে আমদানি করা জ্বালানি তেল পাচার হয়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি মাসে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ করা হলেও, ভারতের সঙ্গে এ দামের বিশাল পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে কলকাতা ও বাংলাদেশের মধ্যে ডিজেল ও পেট্রলের লিটারপ্রতি পার্থক্য ২২ থেকে ২৫ টাকা।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিবছর জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়, যার মধ্যে ৭৩ থেকে ৭৫ শতাংশই ব্যয় হয় ডিজেল আমদানিতে। দামের পার্থক্যের সুযোগে একটি অসাধু চক্র প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর ও সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ তেল পাচার করছে। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, এবং ফেরার সময় অনেক ট্রাকচালক বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিজিবির নজর এড়িয়ে ট্যাংক ভর্তি করে তেল নিয়ে যায়। অনেক চালক আলাদা ট্যাংকে করেও তেল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় তেল ব্যবসায়ীরাও বন্দর এলাকার তেল পাম্প থেকে তেল সংগ্রহ করে এই ট্রাকচালকদের কাছে গোপনে বিক্রি করে থাকেন।

বেনাপোলসহ বিভিন্ন বন্দরে বিজিবির বাড়তি তৎপরতায় ডিজেল পাচারের প্রবণতা কিছুটা কমলেও পাচারের ঘটনাগুলো এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বর্তমানে কলকাতায় প্রতি লিটার ডিজেল ৯১.৭৬ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩০.৪৯ টাকা। আর বাংলাদেশে প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ১০৫.৫০ টাকা। পেট্রলের ক্ষেত্রেও কলকাতায় ১০৪.৯৫ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৯.২৫ টাকা এবং বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে ১২৭ টাকায়। এই দামের পার্থক্যের সুযোগে সীমান্ত এলাকায় পাচারচক্র গড়ে উঠেছে এবং তারা বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ লিটার তেল প্রতিবেশী দেশে পাচার করছে।

দেশে বর্তমানে ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ১৫টি চালু আছে, যার মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। এই পণ্য পরিবহনের জন্য ১৪ লাখেরও বেশি ট্রাক সীমান্ত পারাপার করেছে, যার প্রতিটি ট্রাক ২৫০ থেকে ৫০০ লিটার পর্যন্ত তেল ধারণ করতে সক্ষম।

বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে তেলের দাম কম হওয়ায় পাচারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই দুই দেশের মধ্যে তেলের দামের পার্থক্য কমিয়ে আনলে পাচারের ঝুঁকিও কমে আসবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত তেল আমদানির চাপ কমানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। পাচারের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং পাচার বন্ধ করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান জানিয়েছেন, ভারতে তেল পাচারের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “আমরা মূল্য ব্যবধান এবং মানুষের প্রত্যাশা মিলিয়ে একটি সুষম সমাধানের চেষ্টা করবো, যাতে পাচার বন্ধ হয় এবং দেশের সম্পদ রক্ষা পায়।”

সব খবর