রাজধানীর বনানীতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ভাঙিয়ে সোর্স সহিদের তৎপরতা ক্রমশই বাড়ছে। মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, মাদক সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সহিদের বাসায় অভিযান চালানো হলে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যেতে পারে।
বনানী এলাকার সুদ ব্যবসায়ী লাল মিয়া জানান, এক ব্যক্তিকে সুদে তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে টাকা না দিয়ে পালিয়ে যান। মামলা করতে চাইলে সহিদ পরামর্শ দেন র্যাবের মাধ্যমে টাকা তুলতে এবং বিনিময়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে সহিদের সহায়তায় র্যাবের মাধ্যমে অবৈধভাবে ওই ব্যক্তিকে আটক করে টাকা আদায় করা হয়।
সহিদ র্যাব ও পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে এবং টাকা দিলে যে কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ নানা ক্ষতি করতে সক্ষম। তার কার্যক্রমে বনানী থানা ও র্যাব-১ এর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা সহযোগিতা করছেন। সহিদ বনানী থানাধীন টিএন্ডটি মাঠ সংলগ্ন গোডাউন বস্তিতে থাকে এবং বৃহত্তর কড়াইল বস্তিতে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে। বস্তির মানুষ সহিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ; চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলার হুমকি, ও মাদক দিয়ে ফাঁসানো তার নিত্যদিনের কাজ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একসময় বনানী থানার সোর্স হিসেবে সহিদের বেশ নামডাক ছিল। তবে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে থানার বর্তমান ওসি তাকে আর তেমন ডাকে না। বনানী থানায় সুবিধা করতে না পেরে বর্তমানে সহিদ র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, র্যাবের আটক করা মাদকের কিছু অংশ সহিদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। তাকে বাধা দিলে সেই ব্যক্তিকেই মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়।
সহিদ বর্তমানে মাদক ব্যবসার অবৈধ টাকায় টঙ্গীতে জমি কিনে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন, যদিও বস্তিতে থেকে তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে নিজেকে গরিব বলে তুলে ধরেন। তার ঘরের বাইরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন দেখে স্থানীয়রা বিস্মিত।
সহিদ যে মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করেন (ঢাকা মেট্রো-ল-৫৭-৭৪৬৪), তার ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ নেই। এছাড়া, সহিদ একজন চিহ্নিত জুয়াড়ি। তার ঘরে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসে, যেখানে মদ, বিয়ার, ও ইয়াবা সেবনের সুযোগ রয়েছে। জুয়া খেলায় হারলে সহিদ র্যাবের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন।
বনানীর ৪ নম্বর রোডে গাড়ি চালক মাইনুদ্দিনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে সাদা পোশাকে সহিদসহ ৪ জন পুলিশ পরিচয়ে তার পথ অবরোধ করে এবং পকেটে ইয়াবা দিয়ে তাকে ফাঁসায়। পরে থানায় নেওয়ার ভয় দেখিয়ে মাইনুদ্দিনের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করা হয়। মাইনুদ্দিন অভিযোগ করতে চাইলেও পুলিশকেই জড়িত দেখে ভয়ে আর অভিযোগ করতে পারেননি।
সহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন যে তিনি র্যাব-পুলিশের সোর্স নন। তবে বনানী থানা পুলিশের অভিযানে সহিদের উপস্থিতির একটি ছবি রয়েছে।
সহিদের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।