ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি, বিকাল ৩:০৪
বাংলা বাংলা English English

শুক্রবার, ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাউখালীতে জমিতে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা নিয়ন্ত্রণ


পিরোজপুরের কাউখালীতে ধানক্ষেতে কীটনাশকের পরিবর্তে আলোর ফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা হচ্ছে। আমন ধানের ক্ষেত সুরক্ষায় আলোর ফাঁদ প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কৃষকেরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, যা ক্ষতিকর পোকা শনাক্ত ও দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ফসলি জমিতে পোকামাকড়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য এই পদ্ধতি ইতোমধ্যেই কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে আলোর ফাঁদ স্থাপন করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ধান পাকার আগ পর্যন্ত এই কার্যক্রম চালু থাকবে। আমরাজুড়ি ইউনিয়নের মাগুরা ব্লকের একটি আমনের ক্ষেতে দেখা যায়, ধানের জমির পাশে তিনটি খুঁটির সাহায্যে বৈদ্যুতিক বাতি ঝোলানো হয়েছে। বাতির নিচে ডিটারজেন্টমিশ্রিত পানির পাত্র রাখা হয়েছে। বাতি জ্বালানোর পর বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা এসে সেই পানিতে পড়ে মারা যাচ্ছে। এভাবেই আলোর ফাঁদের সাহায্যে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক বাতি, চার্জার, অথবা সৌরবাতি ব্যবহার করে এই ফাঁদ তৈরি করা হয়।

মাগুরা ব্লকের কৃষক শেখ সাইদুর রহমান ও আল-আমিন তালুকদার জানান, তিনটি বাঁশের খুঁটি, একটি বৈদ্যুতিক লাইট, এবং একটি পানির পাত্র ব্যবহার করে সহজেই আলোর ফাঁদ তৈরি করা যায়। সন্ধ্যাবেলা এই ফাঁদ জমিতে বসানোর পর বিভিন্ন প্রজাতির পোকা আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়ে এসে এতে আটকে পড়ে। এরপর আটকে পড়া পোকাগুলোর মধ্যে ক্ষতিকর পোকা চিহ্নিত করা হয়।

তারা বলেন, পূর্বে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু আলোর ফাঁদের সাহায্যে পোকা শনাক্ত করে সঠিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার প্রদীপ কুমার হালদার জানান, এ বছর কাউখালী উপজেলায় ৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। রোপা আমন মৌসুমে অনেক কৃষক ক্ষতিকর পোকা আক্রমণের আগেই কীটনাশক প্রয়োগ করেন, যা ফসলের জমির উপকারী পোকা ধ্বংস করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। এর ফলে কৃষিক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তাই ক্ষতিকর পোকা চিহ্নিত করার পরই সঠিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের জন্য আলোর ফাঁদের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে কৃষকদের এই প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

কাউখালী উপজেলা কৃষি অফিসার সোমা রানী দাস জানান, উপজেলার ১৫টি ব্লকে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে সহায়ক। অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। তাই সহজ ও কার্যকরী এই পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

সব খবর