অসুস্থতার সময় মহান সৃষ্টিকর্তার পরেই মানুষ আশ্রয় নেয় যে পেশার মানুষের কাছে, তারা হলেন চিকিৎসক। মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে যেসব চিকিৎসক সত্যিকার অর্থেই রোগীদের সেবায় আনন্দ পান, তাদেরই একজন হলেন ডা. মো. নিয়ামুল ইসলাম। রোগীরাও তার ব্যবহারে স্বস্তি পেয়ে অর্ধেক সুস্থ হয়ে যান।
চিকিৎসা একটি বিশেষ শিল্প, যা শিখতে হয় চর্চার মাধ্যমে এবং ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে আত্মস্থ করতে হয়। অনেক চিকিৎসকের মধ্যে আবেগ ও সহানুভূতির অভাব থাকে, যা রোগীদের পছন্দ নয়। ডা. নিয়ামুল ইসলাম এমন একজন মানবিক চিকিৎসক, যিনি রোগের ধরন বুঝে বাস্তবতার সাথে চিকিৎসা করেন। তার ব্যবহারে প্রায় ৩০% রোগী আল্লাহর রহমতে এমনিতেই সুস্থ হয়ে যায়। তাই গরিবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত এই মানবসেবককে নিয়ে আজকের এ লেখা।
ডা. মো. নিয়ামুল ইসলাম বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ঢাকার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন এবং কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। সেই সুবাদে কুলিয়ারচরের মানুষের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তিনি আজও কুলিয়ারচরের মায়া ছাড়তে পারেননি এবং প্রতি শুক্রবার কুলিয়ারচর বাজারস্থ “পপুলার মেডিকেল সেন্টার” এ গরিব, দুঃখী ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে আসেন।
গত শুক্রবার সরেজমিনে “পপুলার মেডিকেল সেন্টার” এ গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের প্রচণ্ড ভিড়। সবার অপেক্ষা ডা. নিয়ামুল ইসলামের জন্য। রোগীদের প্রিয় এই চিকিৎসক যখন সেখানে প্রবেশ করেন, রোগীদের মনে স্বস্তি আসে। তিনি কারোর কাছ থেকে নামমাত্র ভিজিট নেন, আবার কারোর কাছ থেকে ভিজিট ছাড়াই চিকিৎসা দেন।
কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও ডা. নিয়ামুল ইসলাম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুলিয়ারচর উপজেলার অসংখ্য মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। বেশ কিছু রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি কখনোই ভিজিট নিয়ে কারও ওপর জোর করেননি। বরং অনেক সময় গরিব রোগীদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ঔষধ প্রদান করেছেন। আলেম, শিক্ষার্থী, এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতিও তিনি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল।
ডা. নিয়ামুল ইসলাম প্রসঙ্গে উপস্থিত রোগীরা বলেন, তিনি অত্যন্ত অমায়িক, নম্র ও পরোপকারী একজন চিকিৎসক। তার আন্তরিকতা ও ব্যবহারের কারণে রোগীরা মানসিকভাবে অনেকটাই সুস্থ হয়ে যান। ফোনের মাধ্যমেও তিনি অনেককেই চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। কুলিয়ারচর পৌর শহরসহ আশেপাশের এলাকার মানুষ তার সততা এবং মানবিকতার জন্য তাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
ডা. নিয়ামুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের ১ জানুয়ারি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বড়লক্ষীপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. আবদুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ডা. নিয়ামুল ইসলাম রাজবাড়ী থেকে প্রাথমিক শিক্ষা, এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন এবং ২০০১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ২৪তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০৫ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।
চিকিৎসা বিষয়ে একের পর এক ডিগ্রি অর্জনকারী ডা. নিয়ামুল ইসলাম লন্ডনের রয়েল কলেজ থেকে এম.আর.সি.এস ডিগ্রি, বি.সি.পি.এস থেকে এফ.সি.পি.এস ডিগ্রি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১২ সালের ৭ মার্চ কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করার পর থেকে তিনি টানা ৭ বছর সার্জারি বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি ৪ হাজারেরও বেশি গরিব-দুঃখী রোগীর অপারেশন করেন এবং হাওর অঞ্চলে বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করেন।
২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ঢাকার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান এবং সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন গরিবের বন্ধু ডা. মো. নিয়ামুল ইসলাম।