জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের জন্য সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী নির্মাতা ও অভিনেতা খিজির হায়াত খান সম্প্রতি নবগঠিত ১৫ সদস্যবিশিষ্ট চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে স্থান পেয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খিজির হায়াত খানকে বরাবরই বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদের সুরে কথা বলতে দেখা যায়। কখনও নিজের মতামত প্রকাশ করেন, আবার কখনও সমাজের মানুষের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন। সরকার পতনের পরেও বিভিন্ন ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমে তার প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) তিনি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেছেন।
‘ওরা সাত জন’ খ্যাত নির্মাতা খিজির হায়াত খান তার পোস্টে লেখেন, “আপনারা যারা আগস্টের ৫ তারিখের পর থেকে হঠাৎ বাংলার চে হয়ে উঠেছেন, তাদের অনেকেই আন্দোলনের সময় গর্তে লুকিয়ে ছিলেন। নেতা হওয়ার চিন্তা পরে করুন, আপাতত দেশকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন। না হলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের হয়ে আসবে। ধন্যবাদ।”
দেশের বেশিরভাগ নির্মাতা, প্রযোজক ও শিল্পীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সেন্সর বোর্ড বাতিলের। তাদের সেই প্রত্যাশার ভিত্তিতে বিগত সরকারের আমলে সেন্সর বোর্ড বাতিল করে নতুনভাবে সার্টিফিকেশন বোর্ড আইন পাস করা হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৫ সেপ্টেম্বর কেবল সদস্য পরিবর্তনের মাধ্যমে পুনরায় পুরনো সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করেছে।
এরপর থেকেই চলচ্চিত্র সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে নির্মাতা আশফাক নিপুণ ও সদস্য মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বোর্ড থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন।
নির্মাতা ও অভিনেতা খিজির হায়াত খান নতুন চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছেন।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে সঙ্গে আলাপকালে খিজির হায়াত খান নতুন চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “৫৪ বছর ধরে যা হয়নি, সেটি এবার হয়েছে। আমরা এত বছর পর নাম পরিবর্তন করে শুরু করেছি। যদি এই নামকরণের সার্থকতা বজায় রাখতে পারি এবং ২০২৪ সালের মধ্যে হলিউড ও বলিউডের মতো সার্টিফিকেশনের নীতিমালা তৈরি করতে পারি, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আমাদের প্রয়োজন সবাই মিলে গবেষণা করে সেই নীতিমালা তৈরি করা এবং আইন পরিবর্তন করে নতুনভাবে কাজ শুরু করা। আমরা চাই আমাদের সিনেমা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। আমার প্রত্যাশা অনেক। আমি চাই আমার দেশের নির্মাতারা সারা বিশ্বে নিজেদের প্রতিভা ছড়িয়ে দিক। এত বাঁধা পেরিয়ে বাংলাদেশের নির্মাতারা কোথায় যায়নি? মস্কো, বার্লিন, টরেন্টো—সবখানেই গিয়েছে। যদি আমাদের থেকে বাঁধা সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কী না করতে পারব!”
এদিকে, দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো বর্তমানে সিনেমার সংকটে ভুগছে। গেল বছর থেকে হিন্দি ছবি আমদানি শুরু হয়, যার ঘোর বিরোধিতায় ছিলেন খিজির হায়াত খান। সেন্সর বোর্ডের সদস্য পদ পাওয়ার পরও কি তিনি তার পূর্বের অবস্থানে অনড় থাকবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি ভারতীয় ছবি আমদানির বিপক্ষে। তবে সিনেমার সংকটের কারণে আমাদের পরিবেশক ও হল মালিকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই হিন্দি ছবি আসলেও দেশের ছবিগুলোর অবহেলা যাতে না হয়, সেইদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন, সিনেপ্লেক্সে দেশের সিনেমাগুলোকে বেশি শো এবং পিক টাইমে শো দিতে হবে, পরে হিন্দি ছবি প্রদর্শিত হবে।”