প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সামাজিক সমতা, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, আমাদের সংবিধান ও আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ন্যায়বিচার, এবং ন্যায়বিচারের অধিকারসহ আইনের আশ্রয় লাভের বিষয়টি বারবার উল্লেখিত হয়েছে। এজন্য তিনি সামাজিক সমতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান করেন।
তিনি বলেন, একটি মহৎ আদর্শের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। সেই প্রত্যাশা থেকেই আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ জুলাই-আগস্ট মাসে এক অসাধারণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন পরিবর্তনের পতাকা উত্তোলন করেছে, যার লক্ষ্য ছিল দেশের সব স্তরে সামাজিক সমতা, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি আরও বলেন, একটি ন্যায়ভিত্তিক এবং শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইনের শাসন অপরিহার্য।
প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, ২১ সেপ্টেম্বর দেশের বিচারকদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে আমি বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের ঘোষণা দিয়েছি। এই লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজের সবচেয়ে অসহায় মানুষ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতে আইনজীবীদের কাছে যান। এই অসহায় মানুষের আইনি সেবা দেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব আইনজীবীদের রয়েছে। সেই দায়িত্ব পালনে আমাদের সকলকে মানবিক হতে হবে।
আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার সফলতা কেবল মামলার দাখিল, দরখাস্তের অনুমোদন বা অস্বীকৃতি, অথবা জয়-পরাজয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়। আইনজীবী হিসেবে আপনার প্রদর্শিত প্রজ্ঞা এবং উদারতা গুরুত্ব পাচ্ছে— সেটাই মূল বিষয়। আপনি ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটির ওপর ভিত্তি করে আপনার আইনজীবী পরিচয় প্রকাশ পাবে।
তিনি বলেন, আইন পেশা শুধুমাত্র জীবিকা অর্জনের জন্য নয়; অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণের উপায় হিসেবে এটি গ্রহণ করা উচিত, যেখানে আইনজীবী হিসেবে আপনার প্রকৃত সফলতা অর্জিত হবে। মানুষের অধিকার রক্ষা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারালয় স্থাপিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে দেশের সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল। যদি আইনজীবীরা আইন পেশার রক্ষা ও পরিচালনায় যথাযথ নৈতিক মানদণ্ড বজায় না রাখেন, তবে সেই অর্জন ব্যর্থতায় পরিণত হবে।
অনুষ্ঠানে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল কাদের মিয়ার সভাপতিত্বে জেলা দায়রা জজ জিয়া হায়দার, জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা, এবং পুলিশ সুপার আবদুল জলিল উপস্থিত ছিলেন।