ঢাকা, শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, বিকাল ৫:৫৩
বাংলা বাংলা English English

শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের নতুন আশা দেখাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার


শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভবিষ্যতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন দেশটির শরণার্থী ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার জেলার টেকনাফের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই পাওয়া গেছে।

বহু বছরের ক্লান্তি, সহিংসতা ও অনির্দিষ্ট জীবন কাটানোর পর, গত মাসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন রোহিঙ্গা শরণার্থী সনজিদাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। অত্যাচারের মুখে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তার মতো আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।

২০১৭ সালে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিলে এই পদক্ষেপের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হন৷ মিয়ানমারে সেই সময় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে চলছে জাতিসংঘের গণহত্যাবিষয়ক তদন্ত৷

কিন্তু এর পরের বছরগুলিতে বাংলাদেশের এই শিবিরগুলিতে বেড়েছে অপুষ্টির হার, বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা৷ তাই হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছুটা আশার আলো দেখছেন অনেকেই৷

বার্তা সংস্থা এএফপিকে ৪২ বছর বয়সি সনজীদা বলেন, আমরা ও আমাদের বাচ্চারা প্রতি রাতে গোলাগুলির ভয়ে থাকি।

আশ্রয় শিবির চত্বরে স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষাকেন্দ্র আছে, যার একটিতে পড়ান সনজীদা। এই অভিজ্ঞতার ফলে তার গোষ্ঠীর গভীরে থাকা সমস্যাগুলিকে আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান তিনি।

শরণার্থী মর্যাদার কারণে বাংলাদেশি স্কুল, কলেজ বা স্থানীয় কাজের বাজারের বাইরে থাকেন এই শরণার্থীরা। কিন্তু শিবিরের এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলি সব শরণার্থী শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।

আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে আসায় সনজীদার শিক্ষার্থীদের অনেকেই অপুষ্টিতে ভুগছে। তাছাড়া গোলাগুলির শব্দে তারাও ভীত৷ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এবছর এখন পর্যন্ত আশ্রয় শিবিরগুলির ক্ষমতা দখলের জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে মারা গেছেন ৬০ জনেরও বেশি শরণার্থী।

সনজীদা বলেন, আমরা শান্তি চাই, আর গোলাগুলি চাই না৷ এখন নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাই আমাদের আশা, তারা আমাদের শান্তি, সহায়তা, খাদ্য ও নিরাপত্তা দেবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা রাষ্ট্রের প্রশংসা কুড়োলেও নিজের দেশের ভেতরের পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশ্নে বাংলাদেশকে পশ্চিমা রাষ্ট্রের চোখরাঙানি সইতে হয় শেখ হাসিনার আমলে।

কিন্তু শরণার্থী ব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গেও অধিকারকর্মীদের কাছে সমালোচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা ও তার সরকার। অন্যান্য শিবিরে ভিড়ের চাপ কমাতে ভাসানচরে অন্তত ৩৬ হাজার রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হয়েছে গত বছর।

স্থানান্তরিত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেন যে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানে পাঠানো হয়েছে৷ এক শরণার্থী মানবাধিকার সংস্থা হিউমান রাইটস ওয়াচকে বলেন যে, তার এই নতুন বাসা যেন সাগরের মাঝে এক ভাসমান কারাগার দ্বীপের মতো৷

এমন করুণ অবস্থায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাধ্য হন সাগর পেরিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলির উদ্দেশ্যে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় রওয়ানা দিতে৷ সাগরপথে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে।

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়া নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে কাজ করছেন। ৮৪ বছর বয়সি ইউনূসের নেতৃত্বে অনেক শরণার্থীই আশান্বিত হয়েছেন।

৪৮ বছর বয়সী হামিদ হোসেন বলেন, আমরা ফেসবুক ও ইউটিউবে দেখেছি যে আমাদের সম্প্রদায়ের অনেক নেতারা তাদের সাথে কথা বলেছেন, দেখা করেছেন। আমি এখন অনেক আশাবাদী।

কিন্তু বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের দেখভালের জন্য দেশের আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা প্রয়োজন, বলেন ইউনূস।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র সফরে তিনি আরও অর্থ সাহায্যের চেষ্টা চালিয়েছেন৷ ইউনূসের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একান্তে সাক্ষাতের পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুইশ মিলিয়ন ডলারের আরও অর্থায়ন দেবার ঘোষণা দিয়েছে।

তৃতীয় রাষ্ট্রে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়েও সরব হয়েছেন ইউনূস, কারণ, এই মুহূর্তে মিয়ানমারে নিজেদের বাড়িতে তাদের ফিরে যাবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারে অত্যাচারিত হয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা। একের পর এক সরকার বদল হলেও খাতা-কলমে তাদের মর্যাদা ছিল অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সমান।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে একাধিক পরিকল্পনা আলোচনা করে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও মিয়ানমার, কিন্তু কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি৷ এমন পরিকল্পনার বিরোধিতা করে এসেছে রোহিঙ্গারা।

গত বছর থেকে সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে ৪২ বছর বয়সি মোহাম্মদ জোহার বলেন, ‘‘সেখানে তো হত্যালীলা চলছে৷ কীভাবে ফিরে যাব সেখানে?”

সব খবর