কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় জিয়াউর রহমান নামে এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ম্যানেজিং কমিটি। তিনি থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক।সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওই শিক্ষক এর আগেও এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কয়েকদিন হাজতবাস করেছিলেন।
জানাগেছে,উপজেলার থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো.জিয়াউর রহমান জিয়া। তার বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগে চলতি বছরের ২২জুন তারিখে প্রধান শিক্ষক বরাবর অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন,আমার মেয়ে একটি ব্যাচে সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত জেলা পরিষদ ডাকবাংলো সংলগ্ন শিক্ষক জিয়াউর রহমানের নিজস্ব জায়গায় নির্মাণকরা একটি ঘরে প্রাইভেট পড়তো। প্রাইভেট পড়ানোর এক ফাঁকে শিক্ষক জিয়াউর রহমান আমার মেয়েকে টিউবয়েল পাড়ে ডেকে নিয়ে তার স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করেন ও কু-প্রস্তাব দেন। বাড়িতে ফিরে আমার মেয়ে আমাদেরকে এসব কথা জানায়।এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক শিক্ষক জিয়াউর রহমান মুঠোফোনে আমাদের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোগের পেক্ষিতে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভার গৃহিত সিদ্ধান্তানুযায়ী শিক্ষক জিয়াউর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। ২ দফায় অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও তিনি সন্তোষজনক জবাব দেননি। ৩য় দফায় আবারও নোটিশ দেয়া হলে অভিযুক্ত শিক্ষক পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করেন।
এ ঘটনায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মিনহাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত পূর্বক ওই শিক্ষককে দোষী সাব্যস্ত করেন।গত ২৯ আগস্ট কেন তাকে বরখাস্ত করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। সে নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক তৈয়ব আলী স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
উল্লেখ্য এর আগেও এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির মামলায় ২০১৯ সালের ৩ফেব্রয়ারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান পুলিশের হাতে আটক হয়ে দীর্ঘদিন হাজতবাস করেছিলেন। সে সময়ে নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াবেন না মর্মে শর্ত মেনে নিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছিলেন শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলে জানা গেছে।
এদিকে শিক্ষক জিয়াউর রহমানকে বরখাস্তের খবর প্রকাশ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন,দুঃচরিত্রের একজন শিক্ষকের কারণে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাকে চুড়ান্তভাবে বরখাস্তের দাবি করেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বলেন,সাময়িক ভাবে বরখাস্ত নয়,আমি ওই শিক্ষকের চুড়ান্ত বহিস্কারের দাবি করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন,সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে কেউ পত্র দিতে আসেনি।
স্কুলের নিরাপত্তা কমী জয়নাল আবেদীন বলেন আমি জিয়া স্যারকে চিঠি দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু তিনি চিঠি নেন নি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ তৈয়ব আলী বলেন,বিধি মোতাবেক তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।অফিস পিওনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের পত্র দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি পত্রটি গ্রহণ করেননি।পরে পত্রটি ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে তার ঠিকানায় ডাক যোগে পাঠানো হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) নঈম উদ্দিন জানান,শিক্ষক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ থাকায় তদন্ত কমিটি কঠিত হয়েছিল।তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিধি মোতাবেক ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।