রাজধানী ঢাকায় অসংখ্য অনুমোদন ও লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্লাড ব্যাংক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ওসব ব্লাডব্যংকে বিক্রি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত। সরকারি হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ রক্তের ব্যাগ ফেলে দিলে টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ডবয়, আয়া কিংবা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ব্লাড ব্যাংকগুলো তা কিনে নেয়। তারপর মেয়াদ মুছে দিয়ে মুমূর্ষু রোগীর স্বজনদের কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত বিক্রি করছে। এমনকি ওসব প্রতিষ্ঠানে রক্ত সংগ্রহ করার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও কোনো ব্যবস্থা। ফলে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ রক্তে চলে বকশী বাজার, চানখাঁরপুল, গ্রিনরোড, পান্থপথ এলাকার বেশ কিছু ব্লাড ব্যাংকে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ রক্তে মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে মেয়াদোত্তীর্ণ রক্তের বিশাল ব্লাড ব্যাংক সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদনহীন এসব ব্লাড ব্যাংকের তদারকির ব্যাপারে নীরব। অভিযোগ রয়েছে, ওসব অবৈধ ব্লাড ব্যাংক থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়মিত কমিশন পেয়ে থাকেন। তাছাড়া ব্লাড ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার তদবির করেও তারা নেন বড় অঙ্কের কমিশন। ব্লাড ব্যাংকে সায়েন্টেফিক রেফ্রিজারেটর ব্যবহারের আইন থাকলেও ওসব প্রতিষ্ঠানের কাছে সাধারণ রেফ্রিজারেটর বিক্রির ঠিকাদারি নিতো তারা। এমনকি নতুন কোনো ব্লাড ব্যাংক খোলার কথা শুনলেই ওই অসাধু কর্মকর্তারা কনসালট্যান্ট হিসেবে নিজের নাম ঢুকিয়ে দিতেন। তাদের ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন না করেই চলছে ব্লাড ব্যাংক। সূত্র জানায়, ব্লাডড ব্যাংকের কনসালট্যান্ট নিয়োগ সিন্ডিকেটের আটকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা এসব ব্লাড ব্যাংক থেকে কমিশন সংগ্রহ করে অন্যদের বণ্টন করেন। ওই সিন্ডিকেটের কনসালট্যান্টদের এলাকা ভাগ করা আছে। গ্রিনরোডে এলাকার সব ব্লাড ব্যাংকের কনসালট্যান্ট একজন, পান্থপথে অন্যজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রভাবশালী অসাধু কর্মকর্তাদের কারণেই ওসব অবৈধ ব্লাড ব্যাংকে কখনো অভিযান পরিচালনা করা হয় না। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশে সক্রিয় এই সিন্ডিকেট। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত দিয়ে গ্রিনরোড এলাকার বেশ কিছু অবৈধ ব্লাড ব্যাংক চলে। এই মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত রোগীর শরীরে গেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সূত্র জানায়, দেশে প্রতিবছর রক্তের চাহিদা প্রায় ৫ লাখ ব্যাগ। রক্ত নেয়ার সময় হেপাটাইটিস বি ও সি, সিফিলিস, এইচআইভি, ম্যালেরিয়া জীবাণু পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও অবৈধ ব্লাড ব্যাংকগুলো কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করছে। ক্রেতার কাছে রক্ত সরবরাহের সময় ব্যাগের গায়ে লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে মনগড়া রিপোর্ট। শুধু রক্তের গ্রুপ ও ক্রসম্যাচিং পরীক্ষা করেই রোগীর শরীরে রক্ত দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিবিএইচসির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. ফারুক হোসেন জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অবৈধ হাসপাতাল, ব্লাড ব্যাংকের অনুমোদন থেকে শুরু করে কেনাকাটা টেন্ডার বাণিজ্যে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে স্বাস্থ্য খাতে আর কেউ দুর্নীতি করার সুযোগ না পায়।