ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে তোফাজ্জল নামে ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দেশ। এমন হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় থেমে নেই দেশের শোবিজ অঙ্গনও। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আশফাক নিপুন।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুকে নিপুন লিখেছেন, আমি শুধু তাদের মায়েদের কথা ভাবি। এই যে গতকাল তোফাজ্জল নামের এক মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন যুবককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র পিটিয়ে মেরে ফেলল, আমি ভাবি তোফাজ্জলের মা সেটা দেখতে পেলে কি করতেন? জানলাম উনি মারা গেছেন আগেই। কিন্তু এমনও তো হতে পারে তোফাজ্জলের কাছ থেকে ৩ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন উনি, ছেলেকে বাঁচাতে পারছিলেন না দেখে চূড়ান্ত অসহায় বোধ করছিলেন? হয়তো ছেলেকে ভাত খেতে দেখে আশান্বিত হচ্ছিলেন যে ছেলের কিছু হবে না আর, এই যাত্রা বেঁচে যাবে? হয়তো এরপরও নির্যাতনের মাত্রা দেখে আল্লাহর কাছেই ফরিয়াদ করছিলেন ছেলেটার যেন মৃত্যু হয়, ছেলেটা যেন আর কষ্টের ভেতর দিয়ে না যায়?
এরপর লিখেছেন, আবরার ফাহাদের মায়ের কথাও ভাবি। আবরারকে যখন স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হচ্ছিল তখন তার মা পাশে থাকলে কী কষ্টটা পেতেন! বিশ্বজিতের মায়ের কথা ভাবি, ছেলেকে কোপাকুপি করার সময় সামনে থাকলে কি করতে পারতেন তিনি ছেলেকে বাঁচাতে? রাজশাহীতে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী পঙ্গু মাসুদের কথা ভাবি যখন সে পানি চেয়েও পানি পাচ্ছিল না তখন তার মা সেখানে থাকলে কি ছেলের জন্য পানি আনতে ছুটাছুটি করতেন? নাকি সরে গেলে ছেলেকে মেরে ফেলবে এই ভয়ে পানিও আনতে যেতেন না? বা গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দিদারের মৃত্যু? সেই সময় যদি তার মা আশপাশে থাকতেন তাহলে কি ছেলেকে বাঁচাতে পারতেন?
নিপুন আরও লেখেন, আমি শুধু সেইসব মায়েদের কথা ভাবি। যারা ৯ মাস গর্ভে ধারণ করা থেকে সন্তান জন্ম দিয়ে তার পুরোটা জীবন সেই সন্তানকে লালন-পালন করে, বড় করে একদিন জানতে পারেন তার ছেলেকে বা মেয়েকে কেউ মেরে ফেলেছে। কি যায় তাদের ভেতর দিয়ে সেটা ভাবি। তল পাই না। অন্ধকার লাগে সব।
সবশেষে নিপুন প্রশ্ন তোলেন, আমি আমার মায়ের কথা ভাবি। ভাবি আমাকেও যদি কেউ এভাবে দলবেঁধে মেরে ফেলে তাহলে আমার মায়ের কেমন লাগবে? কেমন অসহায় বোধ করবে সে? আপনারাও ভাবেন কি?